আল আমিনের তোপে বরিশালের রুদ্ধশ্বাস জয়

ছোট্ট পুঁজি নিয়েও বোলারদের দাপটে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সিলেট সুপার স্টার্সকে হারিয়েছে বরিশাল বুলস। দলটির টানা দ্বিতীয় জয়ে দারুণ অবদান আল আমিন হোসেন ও তাইজুল ইসলামের।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 02:37 PM
Updated : 24 Nov 2015, 04:49 PM

মঙ্গলবারের দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেটকে ১ রানে হারায় বরিশাল। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের কাছেও ১ রানেই হেরেছিল সিলেট।

আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করা পেসার আল আমিন শুরুতেই বিপদে ফেলেন সিলেটকে। আর নিজের প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে বরিশালের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল।  

মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তিন বল বাকি থাকতে ১০৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বরিশাল। জবাবে ৯ উইকেটে ১০৭ রাতে থেমে যায় সিলেটের ইনিংস। 

বরিশাল ইনিংসের শেষ দিকে মোহাম্মদ শহীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি কাণ্ডে তেতে থাকা আল আমিনের তোপে শুরুতেই দিক হারায় মুশফিকুর রহিমের সিলেট।

এক প্রান্তে সিলেটের ব্যাটসম্যানদের বেধে রাখেন মোহাম্মদ সামি। অন্য দিকে আল আমিন উইকেট শিকারে মেতে উঠলে চতুর্থ ওভারেই ম্যাচে চালকের আসনে চলে আসে বরিশাল।

নিজের প্রথম ওভারেই মুমিনুল হককে ব্রেন্ডন টেইলরের গ্লাভসবন্দি করে প্রথম আঘাত হানেন আল আমিন। পরের ওভারে ফিরে একইভাবে বিদায় করেন রবি বোপারাকে।

পরের দুই বলে নুরুল হাসান ও মুশিফককে বোল্ড করে এবারের আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকের উচ্ছ্বাসে মাতেন আল আমিন। তার তোপে ১৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে সিলেট।

ওয়াইজ শাহর সঙ্গে ৪৩ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন দিলশান মুনাবিরা। দ্বাদশ ওভারে বোলিং এসে জোড়া আঘাতে দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে সিলেটকে আরেকটি বড় ধাক্কা দেন তাইজুল।

এলবিডিব্লউর ফাঁদে পড়েন শাহ। উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে সেকুগে প্রসন্নর ক্যাচে পরিণত হন ৩১ বলে ৩৬ রান করা মুনাবিরা।

লক্ষ্য ছোট ছিল বলে ৬২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও আশা বেঁচে ছিল সিলেটের। নাজমুল ইসলামের সঙ্গে ২৮ রানের জুটিতে দলের প্রথম জয়ের স্বপ্ন আরেকটু উজ্জ্বল করেন নাজমুল হোসেন মিলন।

চার ওভারে মাত্র ৯ রান দেওয়া সামি নিজের শেষ বলে নাজমুল ইসলামকে বোল্ড করে সিলেটের প্রতিরোধ ভাঙেন।

সিলেট তাকিয়ে ছিল ‘ছক্কা মিলন’ নামে পরিচিত নাজমুল হোসেনের দিকে। কিন্তু দলকে হতাশ করেছেন তিনি। আল আমিনের বলে সজোরে হাঁকাতে গিয়ে তাইজুলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন তিনি।

কম রানের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ছিল ৮ রান, হাতে ছিল দুই উইকেট। তাইজুল সেই ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়ে দেন শহীদকে। পরের দুই বলে তিন রান নিয়ে ব্যবধান কমান ফিদেল এডওয়ার্ডস।

এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান শুভাশীষ রায় চতুর্থ বলে কোনো রান না পেলেও পরের বলে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন এডওয়ার্ডসকে। কিন্তু শেষ বলে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি তিনি। তাই টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ১ রানের হার এড়াতে পারেনি দলটি।

৩৬ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে বরিশালের সেরা বোলার আল আমিন। টি-টোয়েন্টিতে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি। তাইজুল ৩ উইকেট নেন ২৩ রানে।

এর আগে শাহরিয়ার নাফীস-রনি তালুকদার ভালো শুরুই এনে দিয়েছিলেন বরিশালকে। দ্রুত রান তোলা এই জুটি চতুর্থ ওভারে ভেঙে যাওয়ার পর খেলার চিত্রটা পাল্টে যায়।

বিনা উইকেট থেকে ৩৪ থেকে এক সময়ে বরিশালের স্কোর ছিল ৫৩/৪। ১৯ রান যোগ করতেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রনি (২০), শাহরিয়ার (১২), টেইলর ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে হারায় দলটি।  

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হলেন টেইলর। নাজমুল ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। আগের ম্যাচে অর্ধশতক করা মাহমুদউল্লাহ এবার ফিরে যান রান আউট হয়ে।

৪ উইকেটে ৭৫ রানে পৌঁছনোর পর আরেকটি ছোটখাটো ধসের মুখে পড়ে বরিশাল। পাঁচ রানের মধ্যে ফিরে যান সাব্বির রহমান (১৫), প্রসন্ন ও কেভন কুপার। সাব্বির, প্রসন্নকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় কুপারকে বিদায় করেন বোপারা।  

১৪ ওভার শেষে বরিশালের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ৮০ রান। দলকে তিন অঙ্কে নিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান সর্বোচ্চ ২৪ রান করা নাদিফ চৌধুরী। কোনো বল না খেলে রান আউট হন সামি।

শেষ ওভারে আল আমিনকে বোল্ড করে বরিশালের ইনিংস গুটিয়ে দেন শহীদ। আল আমিনের আউটের পর জাতীয় দলের এই দুই পেসারের মধ্যে মাঠে মৃদু ধাক্কাধাক্কি হয়।

১৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে সিলেটের সেরা বোলার নাজমুল ইসলাম।