মাশরাফির ব্যাটিং বীরত্বে কুমিল্লার দুর্দান্ত জয়

এক সময়ের ‘অলরাউন্ডার’ পরিচয় মনে করিয়ে দিয়ে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন মাশরাফি বিন মুতর্জা। মারলন স্যামুয়েলস খেললেন দায়িত্বশীল এক ইনিংস। চিটাগং ভাইকিংসকে দ্বিতীয় পরাজয়ের স্বাদ দিয়ে প্রথম জয় পেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 10:03 AM
Updated : 24 Nov 2015, 03:36 PM

কুমিল্লার দুই ওপেনারের আরেক দফা ব্যর্থতায় মাশরাফি ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ৫ নম্বরে। জয়ের জন্য কুমিল্লার তখন চাই ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে। চোখ ধাঁধানো সব ক্রিকেটিং শটের মিশেলে মাশরাফি খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস।

মোহাম্মদ আমিরকে গ্লাইড করে চার মেরে দলকে জিতিয়ে মাশরাফি মাতলেন বিশ্বজয়ের উল্লাসে। ব্যাট ছুঁড়ে ফেলে খ্যাপাটে এক দৌড়ে ছুটে গেলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। মাঠের বাইরে থেকে ছুটে এসে সতীর্থরা অধিনায়ককে তুলে ধরলেন আকাশে!

মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান করে চিটাগং। জবাবে ৭ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কুমিল্লা।

রান তাড়ায় আরেক দফা ব্যর্থ হয় কুমিল্লার দুই ওপেনার। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই আউট ইমরুল কায়েস, লিটন ফিরেছেন ৯ রান করে। কুমিল্লার ইনিংসটা গতি পায় শুভাগত হোমের ছোটো কিন্তু কার্যকর এক ইনিংসে।

উইকেটে গিয়েই তাসকিন আহমেদের এক ওভারে তিনটি চার মারেন শুভাগত। শফিউল ইসলামের এক ওভারে মারেন দুটি ছক্কা। ১৬ বলে শুভাগতর ৩০ রানের ইনিংসটিই জয়ের বিশ্বাস দেয় কুমিল্লাকে।

বাকি সময়টুকু স্যামুয়েলস আর মাশরাফির গল্প। দারুণ সব শটে রানটাকে ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখেন মাশরাফি, স্যামুয়েলস আগলে রাখেন আরেক পাশ। শেষ দিকে হাত খোলেন স্যামুয়েলসও। দুজনের ৬৯ বলে ১২৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই জয় ধরা দেয় কুমিল্লার।

৫২ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত ছিলেন স্যামুয়েলস। তবে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩২ বলে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচসেরা মাশরাফি। ব্যাট হাতে তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়কে মনে করিয়ে দিয়ে খেলেছেন দারুণ সব শট। সোজা ব্যাটে কিছু শট ছিল দেখার মত। ৭৯তম ম্যাচে এটি মাশরাফির প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি!

এর আগে চিটাগং ভাইকিংসকে বড় রান এনে দিয়েছিল জিয়াউর রহমানের ঝড়ো এক ইনিংস। একটা সময় চিটাগংয়ের রান দেড়শ’ হওয়া নিয়েই ছিল খানিকটা শঙ্কা। জিয়ার ঝড়ে শেষ পর্যন্ত দলের রান গিয়েছে দেড়শ’ ছাড়িয়ে আরও অনেক দূর!

১৬ বলে অপরাজিত ছিলেন ৩৯ জিয়া। বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির টানা চার বলেই তিন ছক্কা ও এক চারে নিয়েছেন ২২ রান! শেষ ওভারে ছক্কা মেরেছেন সুনিল নারাইনকেও।

এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামল চিটাগং। প্রথম ম্যাচের মতো এ দিনও দলকে দারুণ শুরু এনে দেন তামিম ও তিলকরত্নে দিলশান। অফ স্পিনার মাহমুদুল ইসলামকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিল কুমিল্লা; তবে কাজে লাগেনি ফাটকা। প্রথম ওভারেই টানা তিন বলে চার মারেন দিলশান। কুমিল্লা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম ওভারেও তামিম-দিলশান মারেন তিনটি চার। নারাইনকে ছক্কায় স্বাগত জানান তামিম।

৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে দিলশানের আউটে। আশার জাইদির বাঁহাতি স্পিনে সুইচ হিট খেলে দিলশান (২১ বলে ৩৬) ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে, সুইচ হিটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হয়ে যাওয়া দিলশানের জন্য যেটি ছিল আসলে স্কয়ার লেগ!

টানা তৃতীয় অর্ধশতকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তামিম। তাকেও ফেরান জাইদি। তিন ছক্কায় ৩৩ করা তামিম আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন লং অফে।

তিনে নেমে এনামুল হক খেলেছেন নিজের মত করেই। এবারের বিপিএলে প্রথমবার মাঠে নামা শ্রীলঙ্কার চামারা কাপুগেদারা ২ রান করে বোল্ড হয়েছে মাশরাফির স্লোয়ারে। তবে আরেকটি কার্যকর ইনিংস খেলেছেন তরুণ ইয়াসির আলি চৌধুরি (১৮ বলে ২২)।

এরপরই দৃশ্যপটে জিয়া, মুহূর্তেই বদলে দেন খেলার মোড়। খারাপ করেননি এনামুলও। ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ৩০ বলে। শেষ ২ ওভারে চিটাগং তুলে নেয় ৩৮ রান!

২৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে কুমিল্লার সেরা বোলার জাইদি। একটি করে নিয়েছেন মাশরাফি ও নারাইন।

তখনও ভাবা যায়নি, এই ম্যাচের ভাগ্য লিখবেন ব্যাটসম্যান মাশরাফি। ভাগ্যের সহায়তাও কিছু পেয়েছেন কুমিল্লা অধিনায়ক। ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন দুই দফায়। আরেক বার রান আউট হয়েছেন ভেবে হাঁটা দিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমের পথে, কিন্তু হননি আউট। শেষ পর্যন্ত তিনিই গড়ে দিলেন ম্যাচের ভাগ্য।

ভাগ্য তো বীরদেরই পাশে থাকে!