আড়ালের যারা বিপিএলে হতে পারেন নায়ক

বিপিএলের তারকামেলায় আলাদা করে আলো ছড়াতে পারেন বাংলাদেশের কিছু প্রতিভাবান ক্রিকেটার। তারকার ছাপ তাদের গায়ে নেই সেভাবে; তবে আড়াল থেকে বেরিয়ে তারাই হয়ে উঠতে পারেন নায়ক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2015, 07:01 AM
Updated : 22 Nov 2015, 10:59 AM

দেশি-বিদেশি তারকাদের ভিড়ে শুরুর আগে হয়ত আলোচনায় নেই তারা। কিন্তু এবারের বিপিএল তাদের জন্য হতে পারে নিজেদের চেনানোর মঞ্চ। তাদের কেউ কেউ ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার, কেউ বা উঠতি ক্রিকেটার। যদিও তারকা ভরা প্রতিটি দলের লাইন আপে তাদের জন্য সুযোগ থাকবে হয়ত খু্ব সামান্যই। তবে তাদের সামর্থ্য আছে সেই সামান্য সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসামান্য হয়ে ওঠার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তুলে ধরছে দেশের তেমন কজন ক্রিকেটারের কথা।

মেহেদি মারুফ, বরিশাল বুলস

ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম খেলেছেন প্রায় ১০ বছর আগে। তবে হারিয়ে গিয়েছিলেন একটা সময়। গত দুই মৌসুম ধরে আবার খেলছেন নিয়মিতই। ব্যাটিংয়ের উন্নতিটাও চোখে পড়ার মতো। গত ঢাকা লিগে করেছিলেন ৫৭৭ রান, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও গত মৌসুমে ৬ ম্যাচে ২ শতকে করেছিলেন ৪৬৪ রান। শট খেলতে ভালোবাসেন এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান, হাতে শটও আছে বেশ। সুযোগ পেলে ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান হতে পারেন বরিশালের নির্ভরতা।

ইয়াসির আলি চৌধুরী, চিটাগং ভাইকিংস

ফিটনেস প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় সুযোগ পাননি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। তবে চট্টগ্রামের হয়ে এবার জাতীয় লিগে খেলেছেন সব ম্যাচ। ৬ মাচে ৫১.৪২ গড়ে রান করেছেন ৩৬০। ১৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে পরিকল্পনাও আছে চিটাগং ভাইকিংসের। সুযোগটা তিনি তাই পাবেন বলেই আশা করা যায়। নিজের শট খেলার সামর্থের প্রমাণও তাই রাখতে পারেন।

মোসাদ্দেক হোসেন, ঢাকা ডায়নামাইটস

এই তালিকার অন্যদের চেয়ে অনেকটাই বেশি পরিচিত নাম মোসাদ্দেক হোসেন। এখানে তার নামটি প্রত্যাশিতই। প্লেয়ার্জ বাই চয়েজ-এ আগ্রহও ছিল তাকে নিয়ে বেশ। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত দুই মৌসুমে তার ব্যাটে রানের জোয়ার, জাতীয় লিগে গড়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে সফরেও দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৬৬ ও ৮৫ রান করে এসেছেন মোসাদ্দেক। হাতে আছে সব ধরনের শট, তার ব্যাট ভালোবাসে ছক্কার স্বাদ পেতে। এই বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২ মাচে ৫১টি ছক্কা মেরেছেন, ছক্কার অর্ধশত করতে পারেননি ক্রিকেট বিশ্বের আর কেউ। স্পিনের বিপক্ষে দারুণ দক্ষ তিনি, তার নিজের অফ স্পিনটাও আবার দারুণ কার্যকরি হতে পারে দলের জন্য।

আরিফুল হক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের হয়ে দারুণ এক শতক করে আলোচনায় এসেছিলেন আরিফুল। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বেশ পুরোনো নাম, তবে নিজেকে হারিয়ে আবার ফিরেছেন সম্প্রতি। এক সময় ছিলেন খানিকটা ব্যাটিং আর খানিকটা পেস বোলিং মিলিয়ে একজন ‘মিনি’ অলরাউন্ডার। তবে গত কিছুদিনে দারুণ উন্নতি করেছেন ব্যাটিংয়ে। শটে আছে বেশ জোর। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য হাপিত্যেশ করছেন কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফি। আরিফুল হতে পারেন সমাধান!

নুরুল হাসান, সিলেট সুপারস্টার্স

অনেকের মতেই নুরুল হাসান এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা উইকেটকিপার। কিপিং টেকনিক প্রায় নিখুঁত, রিফ্লেক্স দুর্দান্ত, অনুমান শক্তি দারুণ। এতে অবশ্য বলা হলো কেবল তার অর্ধেকই। কারণ ব্যাট হাতেও দারুণ সম্ভাবনাময় নুরুল।

ব্যাট হাতে নুরুল রান খোঁজেন সবসময়ই, উইকেটে তাকে থামিয়ে রাখা কঠিন। হাতে জোর যেমন আছে, তেমনি খেলতে উদ্ভাবনী সব শটেও এলোমেলো করে দিতে পারেন প্রতিপক্ষের বোলিং। নুরুলের জন্য পরবর্তী ধাপে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার মঞ্চ হতে পারে এবারের বিপিএল।

আবু জায়েদ চৌধুরী, রংপুর রাইডার্স

ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ পরিচিত নাম এই পেসার। সম্ভাবনাময় পেসার হিসেবে নিজেকে জানান দিয়েছেন বেশ আগে থেকেই। তবে ধারাবাহিকতার অভাব ও চোটের কারণে এখনও আসতে পারেননি জাতীয় দলের আশেপাশে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সম্প্রতি সফর করে এলেন জিম্বাবুয়ে। এবারের বিপিএল তার জন্যও সুযোগ আলোয় আসার।

সৈকত আলি, ঢাকা ডায়নামাইটস

সৈকত আলি ২০০৮ ও ২০১০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত নাম তিনি। মাঝেমধ্যে প্রতিভার জানান দেওয়া দারুণ সব ইনিংস খেললেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে সেভাবে আলোচিত হয়ে উঠতে পারেননি কখনই। সুযোগ পেলে কার্যকরি ইনিংস যেমন খেলতে পারেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, তেমনি ভূমিকা রাখতে পারেন মিডিয়াম পেসেও।

শরিফুল্লাহ, বরিশাল বুলস

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে শরিফুল্লাহ পারফর্ম করছেন বেশ নিয়মিতই। মিডল অর্ডারে পরিস্থিতির চাহিদা মেটানো ব্যাটিং আর বুদ্ধিদীপ্ত অফ স্পিন মিলিয়ে দারুণ কার্যকরী অলরাউন্ডার তিনি।

এবার জাতীয় লিগে ২৪৯ রান করেছেন, উইকেট নিয়েছেন ১৩ টি। সেভাবে বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি এখনও। এবার সুযোগ পেলে হয়ত প্রমাণ করতে পারেন নিজেকে।

আল আমিন, রংপুর রাইডার্স
গড়নে খর্বাকৃতির, তবে প্রতিভা-সামর্থ্যে অনেক বড় আল আমিন। জাতীয় লিগে তার দুটি শতক, একটিতে গতবার করেছিলেন ১৯৯ রানন, আরেকটিতে এবার করেছেন ১৫৭ রান। সবশেষ জাতীয় লিগে ৬ ম্যাচে ৪৮৭ রান করে তিনি চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ২২ বছর বয়সেই টেম্পারামেন্ট দারুণ। এক পাশ আগলে যেমন রাখতে পারেন, প্রয়োজনে খেলতে পারেন শটও। সঙ্গে তার অফ স্পিনও বাড়তি পাওনা হবে দলের জন্য।

ইরফান শুক্কুর, ঢাকা ডায়সামাইটস

চট্টগ্রামে অনেকদিন ধরেই উঠে আসছে না উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিভা। খরার এই সময়ে উজ্জ্বলতম নাম ইরফান শুক্কুর।

শুক্কুরকে চিটাগং ভাইকিংস চেয়েছিল দলে নিতে; কিন্তু প্লেয়ার্স বাই চয়েজ-এ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে লুফে নিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। ব্যাট করতে পারেন টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারে। এখনও কোনো স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেননি ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। আবির্ভাবেই হতে পারেন চমক।