জোড়া শতকের পরও একটু আক্ষেপ মার্শালের

জাতীয় লিগে ঢাকা মেট্রোর হয়ে খুলনার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই শতক করেছেন মার্শাল আইয়ু্ব। হারের মুখ থেকে ফিরিয়ে ড্র এনে দিয়েছেন দলকে। তারপরও স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যানকে ছুঁয়ে যাচ্ছে খানিকটা আক্ষেপ!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 03:19 PM
Updated : 6 Oct 2015, 05:51 PM

জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য বাংলাদেশ ‘এ’ দলের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার জাতীয় লিগের ম্যাচ শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মার্শাল আইয়ুব বললেন, তার আক্ষেপ সেই দলকে ঘিরেই।

“আজকে ম্যাচ শেষে ভাবছিলাম, এই জোড়া সেঞ্চুরি যদি আগের ম্যাচে করতে পারতাম, তাহলে হয়ত ‘এ’ দলে নাম থাকতে পারত…! এটা ভেবে একটু আফসোস হয়েছে।”

সেই আক্ষেপ অবশ্য মুছে দিতে পারছে না প্রাপ্তির আনন্দকে। দুই ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন দলের ভীষণ বিপর্যয়ের সময়। দারুণ দুটি শতকে পরাজয়ের দুয়ার থেকে দলকে এনে দিয়েছেন সম্মানজনক ড্র।

মার্শালের আগে জাতীয় লিগে জোড়া শতক করেছেন আর মাত্র ছয়জন ব্যাটসম্যান। তার ক্যারিয়ারের প্রথম তো বটেই, যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই টানা দুই দিন দুটি শতকের স্বাদ পেলেন প্রথমবার।

তবে নিজের অর্জনের চেয়ে দলকে উদ্ধার করার তৃপ্তিটাই বেশি ছিল মার্শালের।

“দলকে বাঁচাতে পেরেই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। দুই ইনিংসেই আমাদের ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ৩০ রানে। সেখান থেকে কাজটা সহজ ছিল না। ভালো লাগছে যে আমার ইনিংস দুটি দলের কাজে লেগেছে, বিশেষ করে শেষ দিনে।”

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের প্রথম স্তরের এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে খুলনা করেছিল ৪৫৫। জবাবে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারানো ঢাকা মার্শালের ১০৭ রানে শেষ পর্যন্ত করতে পারে ২৭১ রান।

ফলো অনে পড়ে ব্যাটিংয়ে নেমে আবার ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারায় ঢাকা। এবার ১১৫ রানের অপরাজিত মার্শাল, খুলনার মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে দলকে উপহার দেন ড্র।

খুলনার বোলিং আক্রমণ ছিল যথেষ্টই শক্তিশালী। পেস আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে আল আমিন হোসেন। ছিলেন জিয়াউর রহমান। স্পিনে অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তরুণ মেহেদি হাসান (মিরাজ)। মার্শাল সবাইকে সামলেছেন অনায়াসেই।

তার ব্যাটিং সামর্থ্য যেমন তুলে ধরছে এই দুই ইনিংস, তেমনি পরীক্ষা নিয়েছে ফিটনেসেরও। প্রচণ্ড গরমে টিকে থাকতে নিজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, জানালেন মার্শাল।

“অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বিশেষ করে আজকে (মঙ্গলবার) ৭০ রানের পর তো মনে হচ্ছিলো শরীর আর চলছে না। নিজেকে পুশ করতে হয়েছে। আমি শুধু নিজেকে বলেছি যে হাল ছাড়া চলবে না।”

প্রথম ইনিংসের শতকের পথে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫ হাজার রানও পেরিয়েছে তিনি। সেটাও বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে মার্শালকে।

“এটা কালকেই (সোমবার) জানতে পেরেছি, ড্রেসিং রুমে ওরা বলছিল। বিশ্ব ক্রিকেটের হিসেবে যদিও বড় কিছু নয়, কিন্তু আমাদের ক্রিকেটের মানদণ্ডে বড় ব্যাপারই। আমার চেয়ে বেশি রান আছে হয়ত ৭-৮ জনের। অনেক দিন ধরে খেলছি, সেটার একটা পুরস্কার বলা যায় এটা।”

ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই নিয়মিত পারফরমার হয়েও আপাতত তিনি জাতীয় দল, ‘এ’ দলের বাইরে। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট আরেকটু সুযোগ দিলে এবং ভাগ্যকে পাশে পেলে হয়ত টেস্ট দলেই নিয়মিত থাকতে পারতেন মার্শাল!

ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছু বড় ইনিংস খেলে সুযোগ পেয়েছিলেন টেস্ট দলে। ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলেন টেস্ট ক্যাপ। কিন্তু মাত্র ৩টি টেস্ট খেলিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজের মাঝপথে আচমকাই বাদ দেওয়া হলো তাকে!

ওই তিন টেস্টে অবশ্য আহামরি কিছু করতে পারেননি। তবে ছয় ইনিংসের চারটিতেই দুঅঙ্ক ছুঁয়েছেন, ২৫, ৩১, ৪১ রানের ইনিংসগুলোয় ছিল সম্ভাবনার ইঙ্গিত। নিজেকে মেলে ধরার জন্য অন্তত আর ২-৩টি টেস্ট দাবি করতেই পারতেন মার্শাল!

এটা নিয়ে মনে আক্ষেপ থাকলেও অভিযোগ নেই তার। টেস্ট দলে ফেরার স্বপ্ন থাকলেও সেই স্বপ্নে বিভোর নন। মার্শাল আপন করে নিয়েছেন বাস্তবতাকেই।

“আমি আসলে বেশি দূরে তাকাতে চাই না। ইমরান স্যারও (কোচ সরওয়ার ইমরান) বলেছেন বেশি দূরে না তাকাতে। তাহলে ফোকাস নষ্ট নয়, এখনকার কাজটা মনোযোগ থাকে না। আমি তাই শুধু রান করে যেতে চাই। যেখানেই পারি, যত বেশি পারি রান করতে চাই।”

জাতীয় লিগে জোড়া শতক :

ব্যাটসম্যান

রান

ম্যাচ

ভেন্যু

মৌসুম

মিনহাজুল আবেদীন

২১০ ও ১১০

চট্টগ্রাম-ঢাকা বিভাগ

ময়মনসিংহ

২০০১-০২

শাহিন হোসেন

১১৯* ও ১১০*

বরিশাল-চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম

২০০৪-০৫

জাভেদ ওমর বেলিম

১০৬ ও ১৫১

ঢাকা বিভাগ-বরিশাল

ধানমন্ডি

২০০৫-০৬

মোহাম্মদ মিঠুন

১০৯ ও ১০০

খুলনা-সিলেট

চট্টগ্রাম

২০১১-১২

তামিম ইকবাল

১৯২ ও ১১৩*

চট্টগ্রাম-ঢাকা মেট্রো

বগুড়া

২০১২-১৩

ইমরুল কায়েস

১৬৬ ও ১২৭*

খুলনা-বরিশাল

বিকেএসপি

২০১৪-১৫

মার্শাল আইয়ুব

১০৭ ও ১১৫*

ঢাকা মেট্রো-খুলনা

মিরপুর

২০১৫-১৬