সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের উইকেট এতটাই নিষ্প্রাণ যে, ক্রিকেট বিশ্বের কাছে এর পরিচিতি 'সড়ক' হিসেবে। বরাবরই এই উইকেট বোলারদের বধ্যভূমি আর ব্যাটসম্যানদের চারণভূমি। অথচ সেই উইকেটেই এবার সবুজের ছোঁয়া, উপমহাদেশের বিবেচনায় বলা চলে পেসারদের স্বর্গ!
এমন উইকেটের সঙ্গে যোগ হয়েছিল মেঘলা আকাশ। তাল মিলিয়ে দারুণ বোলিংও করেছেন লঙ্কান পেসাররা। কিন্তু এই সব কিছু মিলিয়েও চিড় ধরানো যায়নি চেতেশ্বর পুজারার প্রতিরোধে। এক পাশ আগলে রেখে দ্বিতীয় দিন শেষে পুজারা অপরাজিত ১৩৫ রানে। ১৮০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারত দিন শেষ করেছে ৮ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে।
বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনে খেলা হয়েছিল মাত্র ১৫ ওভার। দ্বিতীয় দিনেও খেলা শেষ হয়েছে ১২.৩ ওভার আগেই।
এই টেস্ট ছিল পুজারার ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবনের সুযোগ। শিখর ধাওয়ান ও মুরালি বিজয়ের চোটে দশ মাস পর একাদশে ঠাঁই পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে এসেই জায়গা পাকা করেছিলেন দলে। টেকনিক ও টেম্পারমেন্টের জন্য নাম পেয়েছিলেন ‘নতুন দ্রাবিড়’। প্রথম ১৬ টেস্টে করেছিলেন ৬ শতক, গড় তখন ৬৭.৬৩। এরপরই ভাটার টান। পরের ১১ টেস্টে শতক নেই, গড় নেমে এলো পঞ্চাশের নীচে। জায়গাও হারালেন দলে। গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে টেস্টের পর থেকেই ছিলেন একাদশের বাইরে।
এরপর নিজেকে শাণিত করতে ঘাম ঝরিয়েছেন অনেক। সতীর্থরা যখন ব্যস্ত আইপিএলে, তিনি তখন ইংল্যান্ডে খেলেছেন কাউন্টি ক্রিকেট। আর ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। অবশেষে সেই সুযোগ এলো দুই সতীর্থের চোটে।
তিন নম্বরে নয়, পূজারার সুযোগ এলো ইনিংস উদ্বোধনে। সেই চ্যালেঞ্জটাও নিলেন পুজারা এবং জিতলেন! সিমিং উইকেটে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ভারতের ভরসা হয়ে উঠলো তার ব্যাট।
কঠিন উইকেটে মনোযোগ, আস্থা আর ধৈর্যর প্রতিমূর্তি ছিলেন যেন পুজারা। ২৮ টেস্টে সপ্তম টেস্ট শতক পূর্ণ করেন ২১৪ বলে।
২ উইকেটে ৫০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে ভারত। এক পাশ আগলে রাখেন পুজারা, আরেক পাশে বিরাট কোহলি (১৮), রোহিত শর্মা (২৬) ও স্টুয়ার্ট বিনিদের (০) নিয়মিত আসা-যাওয়া। আশা জাগিয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি অভিষিক্ত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নামান ওঝা (২১)।
অষ্টম উইকেটে অমিত মিশ্রর সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি গড়েন পুজারা। তৃতীয় টেস্ট অর্ধশতক করে মিশ্র ফেরেন ৫৯ রানে।
শতক পাওয়ার পরও পুজারা লড়াই ছাড়েননি। তার সামনে সুযোগ এখন আদ্যন্ত ব্যাট করার।