চ্যাম্পিয়ন করার কোনো জাদুকরী ফর্মুলা নেই: স্টুয়ার্ট ল

গত সোমবার রাতে আবার বাংলাদেশে পা রেখেছেন স্টুয়ার্ট ল। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ এবার এসেছেন নতুন দায়িত্ব নিয়ে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা। মিশন, শিরোপা জয়!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2015, 01:06 PM
Updated : 25 August 2015, 04:53 PM

আগামী বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে মরিয়া বিসিবি। দেশের কোচদের সঙ্গে তাই যোগ করা হয়েছে এই অস্ট্রেলিয়ান কোচকেও। ১৬ সপ্তাহের চুক্তির এই দফায় ল থাকবেন চার সপ্তাহ। মঙ্গলবার বিসিবিতে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে তার ভাবনা ও পরিকল্পনা।

বাংলাদেশে ফেরা

স্টুয়ার্ট ল: বাংলাদেশে ফিরে ভালো লাগছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের তারকারা যেখান থেকে আসবে, সেই প্রোগ্রামের অংশ হতে পেরে আমি খুশি, কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। গত বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় দল যেভাবে খেলছে, সেটি খুবই রোমাঞ্চকর। আমি নিশ্চিত, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তরুণরাও ওদের নায়কদের অনুসরণ করতে চাইবে। ওই পর্যায়ে যেতে চাইবে।

তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা

ল: বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়ার পর আমি অস্ট্রেলিয়ায় উঠতি তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েই কাজ করেছি। তাদের বোঝার চেষ্টা করেছি। অবশ্যই তারা শারীরিকভাবে প্রস্তুত ও পরিণত নয়, তাদের কোচিং করানোর ধরণটা আলাদা। তবে মূল কথা একই। নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে এবং ক্রিকেট উপভোগ করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম অবশ্যই করতে হবে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের তরুণরাও পরিশ্রম করতে তৈরি। এর মধ্যেই তারা পরিশ্রম করছে। আমাকে যতটা বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ওদের ট্রেনিং হয়েছে অনেক উঁচু মানের। মাঠে স্রেফ ক্রিকেট খেলে যেতে হবে এবং ধরে রাখতে হবে। এই বয়সে জিমে খুব বেশি সময় কাটানোর কিছু নেই। মাঠে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলবে, সেটা শেখাই জরুরি।

 

কোন দিকে গুরুত্ব থাকবে

ল: খুব বেশি দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। দলটা যেভাবে খেলে চলেছে, এটা ধরে রাখতে পারলেই সাফল্য আসবে। দলীয় খেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ভূমিকাটা জানা এবং সেটা মাঠে পালন করা। এই তরুণ দলটি সম্ভবত সেটা এর মধ্যেই ভালোভাবে জানে। আমি এখানে কিছু বদলাতে আসিনি। এমন নয় যে এসেই বলব, ‘এভাবে চলবে না, ওভাবে করতে হবে।’ এখন যে সিস্টেমটা আছে, আমি সেটার বাড়তি সাহায্যকারী হতে চাই। গত বছর দুয়েক ধরে যে লোকগুলো অক্লান্ত এই সিস্টেমে কাজ করে যাচ্ছে, তারা সব জানে। পরিকল্পনাও দাঁড় করিয়েছে। আমি সেটায় বাড়তি কিছু করতে চাই, পুরো বদলে দিতে চাই না।

দেশের মাটিতে যুবাদের বিশ্বকাপ

ল: নিজ দেশে বিশ্বকাপ খেলতে পারা বাংলাদেশের ছেলেদের জন্য হতে যাচ্ছে বড় একটা বাড়তি সুবিধা। যে দলগুলি সাধারণত যুব বিশ্বকাপে ভালো করে, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, তাদের জন্য এটি অচেনা জায়গা। ভারতের জন্য হয়ত অতটা নয়, কিন্তু অন্যদের জন্য এটা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু ক্রিকেটেরই পরীক্ষা নয়, চরিত্রেরও পরীক্ষা। বাংলাদেশের ছেলেদের স্রেফ উদ্দীপনা এবং এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে হবে যে, আমরা জিততে পারি।

বিসিবির চাওয়া শিরোপা

ল: যেকোনো দলকে চ্যাম্পিয়ন করাই কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর এটা এক জনের ওপর নির্ভরও করে না। এমন নয় যে, একজন এসে কিছু করল আর বলে দিল আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। ক্রিকেটাররা যদি পরিশ্রম করে যেতে থাকে, কোচরা যদি তাদের পরিচর্যা করতে থাকে, খুব বেশি বদলানোর চেষ্টা না করে, তাহলেই হবে। ক্রিকেট খুবই মৌলিকত্বের একটা খেলা। একটা দলকে চ্যাম্পিয়ন করার কোনো জাদুকরী ফর্মুলা নেই। সত্যিকারের কঠোর পরিশ্রম আর নির্দিষ্ট দিনে ভালো পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে। জয়ের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। চেষ্টা করা যায় নির্দিষ্ট দিনে মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার। সেটা করতে পারলে ব্যর্থতার চেয়ে সফল দিনই বেশি আসবে।

 

তরুণদের নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ

ল: ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়স একটা ছেলেকে তৈরি করা ভিন্ন একটা চ্যালেঞ্জ। তরুণরা যখন কথা শোনে, উপদেশ মেনে সেভাবেই অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করে এবং মাঠে দেখায়, তখন সেটা আমাকে দারুণ নাড়া দেয়। সব দলে কাজ করতেই আমার ভালো লাগে। এখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল আমার দল। আর আমি হারতে পছন্দ করি না। হারতে ঘৃণা করি। কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে পারলে তাই আমি খুশি থাকব।

দলে সুনির্দিষ্ট যা যোগ করতে চান

ল: আমার নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে আমি যেটা শিখেছি, একটা দলে জিততে জিততে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি চলে আসতে পারে। ক্রিকেটে ব্যাপারটা এমন নয় যে, গত ম্যাচে যেখানে শেষ করেছি, সেখান থেকে শুরু হয়। প্রতিদিনই নতুন করে শুরু করতে হয়। অনেক সময় একটা ম্যাচ জেতার পর তৃপ্তি চলে আসে। কিংবা একটা শতক করার পর পরের ম্যাচেই হয়ত প্রথম-দ্বিতীয় বলে কেউ খোঁচা মেরে দিল। আমি ছেলেদের এটা বোঝানোর চেষ্টা করব। বোঝাতে চাইব যে, ক্রিকেট খুব কঠিন। বোঝাতে চাইব যে, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, কঠোর পরিশ্রম করেই যেতে হবে। সফল দলগুলিই এটা করেছে সবসময়। তারা কখনোই তৃপ্ত হয় না, দিনের পর দিন মৌলিক ব্যাপারগুলো ঠিক রেখে যায়।

দেশের মাটিতে প্রত্যাশার চাপ

ল: দেশের মাটিতে খেলা সবসময়ই চাপ। কিন্তু এই ছেলেরা যখন ক্রিকেটকেই তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, চাপের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়ও এখনই। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপের তুলনায় এই চাপ তো কিছুই না। বাংলাদেশের মানুষ দলকে ভালো করতে দেখতে চায়, এটা দারুণ ব্যাপার। জাতীয় দলেরও কৃতিত্ব আছে এতে; তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সবার প্রত্যাশা বেড়েছে। এখন জুনিয়রদের সময়। ওরা যদি জয়ের চিন্তা না করে বেসিকগুলো ঠিক রাখায় মন দেয়, ছোট ছোট ব্যাপারগুলি ঠিক করে, তাহলে আসল উদ্দেশ্যও পূরণ হবে।