টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতির জন্য টেস্ট কমাচ্ছে বিসিবি!

আগামী বছরের শুরুতে জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ সিরিজে ৩টি টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও একটি টেস্ট কমিয়ে দিচ্ছে বিসিবি। বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাইমুর রহমান জানালেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য কমানো হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2015, 02:45 PM
Updated : 24 August 2015, 02:45 PM

আগামী জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুয়ে। গত বছরের মতো আসছে সফরেও হওয়ার কথা ছিল তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।

বিসিবিতে সমন্বয় সভা শেষে সোমবার বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাইমুর জানালেন অন্যরকম একটি বিষয়।

“জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এখনও আলাপ হচ্ছে আমাদের। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি একটা টেস্ট কমিয়ে ২টি করার। ওরা আমাদের বলেছে যে নিজেরা কথা বলে জানাবে।”

ওই ‘কথা বলে জানানো’ আসলে আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশ যেহেতু আতিথ্য দিচ্ছে জিম্বাবুয়েকে, এখানে বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার সুযোগ জিম্বাবুয়ের খুব একটা নেই।

বিসিবির এই প্রস্তাব অনেকের কাছেই বিস্ময় হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট আঙিনায় কান পাতলেই শোনা যায় খুব বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলতে না পারার হাহাকার। সেখানে উল্টো নিজেরাই কিনা কমিয়ে দিচ্ছে একটি টেস্ট!

নাইমুরের ব্যাখ্যাটাও জন্ম দিলো নতুন বিস্ময়ের।

“ওই সময় আমাদের অনেক খেলা আছে। ক্রিকেটারদের বিশ্রাম, রিকভারির পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, এসব ভাবতে হবে। টেস্টের পর আমাদের ওয়ানডে ও কিছু টি-টোয়েন্টি কমিটমেন্ট আছে। সেটার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্যই টেস্ট কমিয়ে টি-টোয়েন্টি প্রস্তুতির কথা ভাবা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের পর ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিও খেলবে বাংলাদেশ। এরপর এশিয়া কাপ হবে এবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। তার পরপরই ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোর জন্য ক্রিকেটারদের ফিট ও চাঙ্গা রাখতেই মূলত টেস্ট ম্যাচ কমিয়ে দিচ্ছে বিসিবি।

ক্রিকেট পাড়ায় অবশ্য গুঞ্জন আছে, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নিজেও টেস্ট কমাতে গররাজি ছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলের কোচ চন্দিকা হাতুরুসিংহের চাওয়াতেই মূলত কমানো হয়েছে টেস্ট ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩টি টেস্ট খেলে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করতে নারাজ কোচ।

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অবশ্য আড়ালের চাপের কথা সরাসরি স্বীকার করলেন না ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান।

“অন্য জায়গা থেকে প্রস্তাব এসেছে কিনা জানি না। আমি সবসময়ই চাই টেস্ট বেশি খেলতে। টেস্ট বেশি ছিলও, কিন্তু অন্য কমিটমেন্টগুলোও দেখতে হবে। আমিও পরে দেখেছি যে বাস্তব কারণে টেস্ট বেশি খেলা সম্ভব না। ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতির জন্য টেস্ট কমানো হয়েছে।”

অথচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যথেস্ট প্রস্তুতির সুযোগ আছে সূচিতে। আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির প্রতিযোগিতা বিপিএল হবে।

নাইমুর রহমান বললেন, ক্রিকেটারদের চোট-আঘাতের শঙ্কার কথা।

“ক্রিকেটারদের বিশ্রামের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। ওই সময় এত এত খেলা। টেস্ট বেশি খেললে…আমাদের ফ্রন্ট লাইন পেস বোলাররা ইনজুরিতে ভুগছে এর মধ্যেই। তাদের রিকভারির কথাও ভাবতে হবে।”

প্রশ্নের অবকাশ থাকল এখানেও। ক্রিকেটারদের বিশ্রামের কথা ভাবলে টেস্ট না কমিয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে অনায়াসেই টি-টোয়েন্টি একটি-দুটি কমানো যেত। বিশ্বকাপের প্রস্ততির জন্য বিপিএল-এশিয়া কাপ তো থাকছেই! তাছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে মূল ক্রিকেটার এবং পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানোর কথাও ভাবা যেত।

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আবারও বললেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শারীরিক সামর্থ্যের কথা।

“টেস্ট ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটাও ভাবতে হবে একজন ক্রিকেটার তিনটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে, তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলার পর তার ভেতরে কি অবস্থা হয়…আমরা জানি আমাদের শারীরিক অবস্থা এখনও ওইরকম হয়নি। বিশেষ করে পেস বোলারদের নিয়ে চিন্তা করতে হয় বেশি।”

আগামী ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে পা দেওয়ার কথা জিম্বাবুয়ে দলের। এই সিরিজ দিয়েই টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হতে পারে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের। দ্বিতীয় টেস্ট হওয়ার কথা খুলনায়।

এই সিরিজ ছাড়াও আগামী বছর প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে ভারতে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। ওই সফরে হবে স্রেফ একটি টেস্ট ম্যাচই। অক্টোবর-নভেম্বরে দেশের মাটিতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হওয়ার কথা দুটি টেস্ট। ডিসেম্বর আর পরের বছর জানুয়ারি মিলিয়ে সফর আছে নিউ জিল্যান্ডে, যেখানেও খেলার কথা দুটি টেস্ট।