রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ফ্লাইটেড ডেলিভারি টার্ন করে ব্যাটে চুমু দিয়ে জমা পড়ল গালিতে থাকা মুরালি বিজয়ের হাতে। ব্যাট বগলদাবা করে হাঁটা দিলেন সাঙ্গাকারা। মুহূর্তের থমকে যাওয়া নয়, একটি-দুটি অগোছালো পদক্ষেপও নয়। ড্রেসিং রুমের পথে সোজা হাঁটা, দ্রুত পায়ে। আন্তর্জাতিক আঙিনায় ১৫ বছরের পথচলায় শেষবারের মতো!
ক্ষণিকের হতাশায় গ্যালারিতে স্ত্রী ইয়েহালির হাত কপালে। রোদ চশমার ফাঁক গলে চোখদুটিও কি একটু মোছার চেষ্টা করলেন? গ্যালারিতে অনেক দর্শকের মাথায় হাত। দিনের খেলার তখনও ঢের বাকি। কিন্তু দর্শকের সারি বাইরের পথে। যার রঙিন শেষের সাক্ষী হতে মাঠে আসা, সেই সাঙ্গাকারাই যে আউট হয়ে গেলেন!
শেষটা রাঙিয়ে যাওয়া হলো না সাঙ্গাকারার। প্রথম ইনিংসের ৩২ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে আউট ১৮ রানে। ৫৮-এর বেশি গড় নিয়ে শুরু করেছিলেন বিদায়ী সিরিজ। ২ টেস্ট মিলিয়ে ৪ ইনিংসে ৯৫ রান করায় নেমে এলো গড়, ক্যারিয়ার শেষ করলেন ৫৭.৪০ গড় নিয়ে। স্পিনের বিপক্ষে বরাবরই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান শেষ সিরিজে চার ইনিংসেই আউট হলেন অশ্বিনের অফ স্পিনে।
স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ১২টি দ্বিশতকের রেকর্ড অধরাই থেকে গেল। শ্রীলঙ্কার সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানের লড়াইয়ে অনেকেই সাঙ্গার সঙ্গে যার তুলনা করেন, সেই অরবিন্দ ডি সিলভা ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে করেছিলেন বলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া দ্বিশতক; এই পি সারা ওভালেই ২০০২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
আসলেই কি তাই? উইকেট পাওয়ার উচ্ছ্বাসে দ্রুতই বিরতি দিয়ে ভারতের সব খেলোয়াড় যে ছুটলেন আউট হওয়া ব্যাটসম্যানকে অভিনন্দন জানাতে! একটু করদর্মন, শেষবারের মতো কিংবদন্তির একটু ছোঁয়া পাওয়ার চেষ্টা! ১৮ রান করে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সম্মানে দাঁড়িয়ে মাঠের সবাই!
বছরের পর বছর ধরে লঙ্কান ক্রিকেটের ‘সমর্থক নম্বর ওয়ান’ পার্সি অভয়সেকেরা ঠিকই জাতীয় পতাকা উড়িয়ে মাঠ থেকে বরণ করে বাইরে নিয়ে এলেন নায়ককে। শেষটা আর কজন মনে রাখে, সাঙ্গাকারা সবসময়ই লঙ্কান ক্রিকেটের মহানায়ক।
শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি শতক, ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দ্বিশতক, ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ায় মহাকাব্যিক সব ইনিংস, ২০১১ সালে এমসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট কাউড্রে লেকচারে অসাধারণ সেই বক্তৃতায় ক্রিকেট বিশ্বের মন জয় করা, ক্রিকেটার পরিচয় ছাপিয়ে ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা আর অসাধারণ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া, বিদায় বেলায় পুরো ক্রিকেট বিশ্বের টুপি খোলা অভিনন্দন, প্রাপ্তির পাল্লা কত সমৃদ্ধ!
সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ার যেন চোখধাঁধানো অসংখ্য মনিমুক্তা খচিত উজ্জ্বল এক রাজমুকুট। শেষের ব্যর্থতার সাধ্য কি সেই মুকুটের ঔজ্জ্বল্য এতটুকু ম্লান করবে!