আকাশ ছোঁয়ার তাড়না থেকেই স্টুয়ার্ট লকে ফেরানো

দেশের মাটিতে আগামী যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বাংলাদেশ। প্রস্তুতিতে তাই কোনো ঘাটতি না রাখতেই বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে আনা হচ্ছে স্টুয়ার্ট লকে। বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান খালেদ মাহমুদ জানালেন, অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে বিসিবি।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2015, 01:20 PM
Updated : 4 August 2015, 04:41 PM

সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফিরছেন জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল। তবে এবার নতুন দায়িত্ব নিয়ে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-‌১৯ দলেল টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্বে মাত্র ১০ মাসেই দারুণ সম্ভাবনার ইঙ্গিত ছিল লর কোচিংয়ে। তার অধীনেই ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার ফিরে আসা তাই একদিক থেকে সুখবরই।

তার পরও অবশ্য খবরটি চমক হয়ে এসেছে অনেকের কাছে। সেটির কারণ, তার দায়িত্বটিই। দেশী কোচদের কোচিংয়েই দারুণ পারফর্ম করছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর ফিরতি সফরে কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও তারা জিতে এসেছে ৫-২ ব্যবধানে। এর আগে সিরিজ জিতে এসেছে শ্রীলঙ্কা থেকে। দলটির টিম স্পিরিটও এই মুহূর্তে দারুণ। প্রধান কোচ মিজানুর রহমান ও সহকারী কোচ সোহেল আহমেদের তত্ত্বাবধানে দলটিকে মনে হচ্ছে সুখী এক পরিবার। হঠাৎ সেখানে কেন প্রয়োজন পড়ল আরও এক বড় কর্তার?

বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিরফর ডটকমকে জানালেন, অস্ট্রেলিয়ার লকে আনার পেছনে ভাবনার কথা।

“অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখি আমরা। আকাশ ছোঁয়া বলতে, আগামী বছর নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ, আমরা চাই চ্যাম্পিয়ন হতে। আমাদের দল খুব ভালো খেলছে, কোচরাও খুব ভালো করছে। তারপরও আমাদের মনে হয়েছে একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। অনেক দিন থেকেই আমরা খুঁজছিলাম ভালো কাউকে। স্টুয়ার্টকে যখন পেলাম, ওকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।”

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বরাবরই বাংলাদেশের জন্য আক্ষেপের গল্প। প্রায় প্রতিবারই দারুণ সম্ভাবনাময় থাকে দল, অনেক আশা নিয়ে যায় বিশ্বকাপে। কিন্তু বারবারই সবচেয়ে প্রয়োজনের ম্যাচটিতেই কিভাবে যেন হেরে বসে যুবারা। ১৯৮৮ সালে প্রথম যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল ছিল না। সহযোগী দেশগুলোর একটি সম্মিলিত দল ছিল যেখানে বাংলাদেশ থেকে খেলেছিলেন আমিনুল ইসলাম ও হারুনুর রশিদ। তবে ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় যুব বিশ্বকাপ থেকে নিয়মিত খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু ৯ বারের মধ্যে মাত্র ৩ বার ট্রফির মূল প্রতিযোগিতা বা কাপে খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকি ৬ বারই গ্রুপ পর্বে বাজে করায় খেলতে হয়েছে সান্ত্বনার প্লেট চ্যাম্পিয়নশিপে। এর মধ্যে চারবার হয়েছে প্লেট চ্যাম্পিয়ন, একবার রানার্স আপ। কাপে যে তিনবার খেলেছে, সেমি-ফাইনাল খেলতে পারেনি একবারও। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় মুশফিক-সাকিব-তামিমদের দলের পঞ্চম হওয়াই এখন পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। কাপে খেলা বাকি দুবারে বাংলাদেশ হয়েছে সপ্তম ও অষ্টম।

খালেদ মাহমুদের কথাতেও উঠে এল ওই প্রয়োজনের মুহূর্তটি জয় করার তাগিদ।

“প্রতিবারই দেখা যায় টুর্নামেন্টের আগে আমরা ভালো খেলি, টুর্নামেন্টেও ভালো খেলি।। কিন্তু মূল ম্যাচটিতে বা প্রয়োজনের সময়ই হেরে যাই। অনেক সময়ই বিভিন্ন ট্যাকটিক্যাল ইস্যুর কারণে কাপে খেলতে পারি না, প্লেটে খেলতে হয়। স্টুয়ার্ট এত ভালো ট্যাকটিক্যাল কোচ, আমাদের দেশের ক্রিকেটকে জানেও ভালো। আমাদের মনে হয়েছে ওকে আমাদের কাজে লাগবে।”

প্রধান কোচ ও সহকারী কোচের সঙ্গে টেকনিক্যাল উপদেষ্টার কাজের পার্থক্যটাও ব্যাখ্যা করলেন খালেদ মাহমুদ।

“স্টুয়ার্টের কাজটা হবে কো-অর্ডিনেট করা, ছেলেদের অনুপ্রাণিত করা। ট্যাকটিক্যাল দিকগুলো নিয়ে ক্রিকেটার এবং কোচদের সঙ্গে কাজ করা। সে হবে অভিভাবকের মতো, দলের মাথা। মূল কাজ অবশ্যই বাবুল ভাই (প্রধান কোচ মিজানুর রহমান), সোহেল (সহকারী কোচ) করবে। কিন্তু স্টুয়ার্ট হবে বাড়তি শক্তি। পাওয়ার জেনারেট করার মত।”

এতে আবার হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কাও থাকে। গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও দলের দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান। বেশ কয়েক বছর ধরেই দায়িত্বে আছেন, দলকে গড়ে তুলেছেন। ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্কও দারুণ। সুখী সংসারে নতুন কর্তার আগমণে ব্যক্তিত্বের সংঘাত হতে পারে। ছেলেরাও বিভ্রান্ত হতে পারে, ভড়কে যেতে পারে। খালেদ মাহমুদ অবশ্য সেই শঙ্কা করছেন না একটুও।

“হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা নেই। আমরা লকে পরিষ্কার করেই বলেছি, ‘আমাদের কোচরা দারুণ করছে। সেটাকে ডিসটার্ব করার সুযোগ নেই।’ ওকে আনা বাড়তি কিছু যোগ করতে। বাবুল ভাইয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি আমরা। আমার বিশ্বাস, এটা ইতিবাচকই হবে। ওর মতো একজন বিশেষজ্ঞ অবশ্যই দলের কাজে লাগবে।’

কোচ মিজানুর রহমানও স্বাগতই জানাচ্ছেন স্টুয়ার্ট লকে।

“সে অনেক বড় ক্রিকেটার ছিল, কোচ হিসেবেও থুব ভালো। শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আর দলের জন্য বা ছেলেদের জন্য ভালো হতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপেই আমার আপত্তি নেই।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা যোগ করলেন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন। দীর্ঘদিন তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। জানালেন, লকে আনার পেছনে বিশ্বকাপই শেষ কথা নয়।

“প্রথমত, আমার স্থানীয় কোচরা দলকে নিয়ে অসাধারণ কাজ করছে সন্দেহ নেই। তবু আরও বাড়তি কিছু যোগ করার সুযোগ থাকলে করাই উচিত। আর বিশ্বকাপই শেষ কথা নয়। বিশ্বকাপে ভালো করা অবশ্যই প্রথম লক্ষ্য। তবে স্টুয়ার্টের মত একজন কোচকে পেলে আমাদের তরুণ ক্রিকেটারদের গাঁথুনি আরও পোক্ত হবে। ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছু শিখতে পারবে ছেলেরা। তাছাড়া স্টুয়ার্টের মত অভিজ্ঞ একজনের কাছ থেকে স্থানীয় কোচরাও অনেক শিখতে পারবে।”

২০১১ সালের জুলাই থেকে পরের বছর মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন ল। সে সময় আচমকাই ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব ছেড়ে ফিরে যান দেশে। এর আগে ছিলেন শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের সহকারী কোচ, কিছুদিন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচও। সবশেষ অস্ট্রেলিয়ায় শেফিল্ড শিল্ডে কুইন্সল্যান্ড ও বিগ ব্যাশে ছিলেন বিসবেন হিটের কোচ। গত জানুয়ারিতে ছেড়ে দেন দুটি দায়িত্বই।

লর কোচিংয়ে ২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া।

এবার বিসিবির সঙ্গে তার চুক্তি ১৬ সপ্তাহের। টানা অবশ্য থাকবেন না। নতুন দায়িত্বে প্রথম দফায় ঢাকা আসার কথা আগামী ২৪ আগস্ট।