হানসি ক্রনিয়ের সেই দলের কেউ আর নেই দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলে। তবে ঘটনাটি অজানা থাকার কথা নয় কারও। ক্রিকেট ইতিহাসেই যে সেটির নজির আর নেই! ২০০০ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট; প্রথম দিনে ৪৫ ওভার খেলা হয়েছিল। পরের তিনদিনই ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। শেষ দিন ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। ওই দিন সকালে ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইনকে অভিনব এক প্রস্তাব দিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ক্রনিয়ে। দুই দলই একটি করে ইনিংস ছেড়ে দিলে কেমন হয়?
সোজা হিসেবে, এক ইনিংসের খেলা। ম্যাচের রোমাঞ্চ-উত্তেজনা, দর্শকের কথা ভেবে ক্রনিয়ের প্রস্তাবে রাজি হলেন হুসেইন। প্রথম দিনে ৬ উইকেটে ১৫৫ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ দিনে আর ২৭ ওভার ব্যাটিং করে ইনিংস ঘোষণা করল ৮ উইকেটে ২৪৮ রানে। এরপর প্রথম ইনিংস ব্যাটিং না করেই ছেড়ে দিল ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় ইনিংস ছেড়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ৭৬ ওভারে ২৪৯। নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচ ৫ বল বাকি থাকতে ইংলিশরা জিতেছিল ২ উইকেটে। আইসিসি এটির সমালোচনা করলেও দারুণ স্পিরিটের জন্য ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে প্রশংসা পেয়েছিলেন দুই অধিনায়ক। পরে অবশ্য আবিষ্কার হয়েছিল ঘটনার নেপথ্য। বাজিকরদের সঙ্গে যোগসাজশে ম্যাচে ফলাফল আনতেই ইনিংস ঘোষণার ওই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্রনিয়ে। প্রশংসনীয় ঘটনা তাই পরে হয়ে গেছে কলঙ্কের উদাহরণ।
২০০১ সালে বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড হ্যামিল্টন টেস্ট; প্রথম দুই দিনই ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। তৃতীয় দিনেও খেলা হয়নি ঘন্টা দুয়েক। অবিশ্বাস্যভাবে সেই ম্যাচও বাংলাদেশ হেরে বসেছিল পঞ্চম দিন সকালেই। মাত্র ৭৭ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল নিউ জিল্যান্ড। দুই ইনিংসে ২০৫ ও ১০৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ৫২ রানে। বলতে গেলে দুই দিনেই হেরেছিল বাংলাদেশ!
সেটি অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের আদি যুগ। টেস্ট ক্রিকেটের ভাষাটা তখনও রপ্ত করতে পারেনি ক্রিকেটাররা। সেক্ষেত্রে একটি সাম্প্রতিক উদাহরণও আছে। ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্টের স্মৃতি তো এখনও তরতাজাই থাকার কথা। পুরো একদিন খেলা হয়নি বৃষ্টিতে, অন্য সব দিনেও ছিল বৃষ্টির হানা। সব মিলিয়ে ওভারের হিসাবে দিন দুয়েক খেলা হয়েছিল। তাতেই প্রচণ্ড চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কে জানে, ফলো অনে পড়া বাংলাদেশ হয়তো আরেকটি সেশন খেলা হলে হারতেও পারত!
চট্টগ্রামেই আরেকটি টেস্টের উদাহরণ টানা যায় অনায়াসেই। অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুর রহিমের সেটি প্রথম টেস্ট। ২০০১ সালের অক্টোবরে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই সময় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থার করুণ অবস্থার কারণে আধ ঘণ্টার বৃষ্টিতে খেলা হয়নি আড়াই দিন; ম্যাচ হয় ড্র।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার ছবিও আছে। দুই দিন কাভারের নিচে থাকা, রোদের ছোঁয়া না পাওয়া উইকেট বোলারদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। বোলাররা ভালো বল করলে তাই চমকপ্রদ কিছু ঘটিয়েও ফেলতে পারে বাংলাদেশ। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই বার অলআউট করার ভাবনা এই মুহূর্তে মনে হতে পারে আকাশকুসুম কল্পনা। সেটা না হলেও প্রোটিয়াদের চাপে রেখে অন্তত নৈতিক জয়ের তৃপ্তি নিয়ে সিরিজ শেষ করতে পারে বাংলাদেশ।
এই টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রাপ্তি এই মুহূর্তে ড্রয়ের স্বস্তি। তবে আগের উদাহরণ থেকে আছে শঙ্কা। আবার বাস্তবতা দেখাচ্ছে সম্ভাবনার ছবিও। দুটি দিন ভেসে গেলেও তাই পুরোপুরি ভেসে যায়নি এই টেস্টের রোমাঞ্চ।
তবে রোমাঞ্চ যেটুকু বাকি, সেটির জন্যও আগে তাকিয়ে থাকতে হবে আকাশের দিকে। দুটি দিন পুরো খেলা তো হতে হবে।