শেষ সেশনে লাগাম ছুটল বাংলাদেশের

শুরুটা ভালো না হলেও সামলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ সেশনে আবার দিক হারায় তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে লড়াই করার মতো সংগ্রহ গড়তে এখন স্বাগতিকদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দলে ফেরা নাসির হোসেনের দিকে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2015, 03:16 AM
Updated : 30 July 2015, 11:37 AM

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৪৬ রান। নাসির হোসেন ১৩ রানে ব্যাট করছেন। গত সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সর্বশেষ টেস্ট খেলা এই অফ স্পিন অলরাউন্ডারের খেলতে হবে মুস্তাফিজ ও জুবায়ের হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম ওভারেই তামিমকে হারায় বাংলাদেশ।

ডেল স্টেইনের আগের ওভারেই ফিরে যেতে পারতেন তামিম। সেবার দ্বিতীয় স্লিপে ডিন এলগার ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি স্বাগতিক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পরের ওভারেই অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে হাশিম আমলাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তামিম। 

তামিমকে ফিরিয়ে চারশ’ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন স্টেইন। শন পোলকের পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখান তিনি।

দিনের প্রথম সেশনে তামিমের উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হকের ৬৯ রানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে এগিয়ে যেতে থাকে স্বাগতিকরা।

স্টেইন, ভার্নন ফিল্যান্ডার, মর্নে মর্কেল, সাইমন হার্মারদের ভালো ভাবেই সামাল দেন ইমরুল-মুমিনুল। এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে মধ্যাহ্ন-বিরতির পর অফ স্পিন অলরাউন্ডার জেপি দুমিনিকে আক্রমণে আনেন আমলা। নিজের প্রথম ওভারে কিছু করতে না পারলেও পরের দুই ওভারে থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন দুমিনি।

দুমিনির অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বল কাট করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। বল শরীরের খুব কাছে থাকায় ঠিক মতো খেলতে পারেননি। একটু লাফানো বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে ড্যান ভিলাসের গ্লাভসে। টেস্টে এটাই এই উইকেটরক্ষকের প্রথম ডিসমিসাল। পরের ওভারে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন দুমিনি।

৫ রানের ভেতর মুমিনুল-ইমরুলকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। তাদের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় সেশনে ৭৯ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৪ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন এই দুই ব্যাটসম্যান।

নিজের চতুর্থ স্পেলে ফিরে মাহমুদউল্লাহকে বাভুমার ক্যাচে পরিণত করেন আইসিসি টেস্ট র‍্যাংঙ্কিংয়ের শীর্ষ বোলার স্টেইন।  তার বলে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ।

টেস্টে ১১ ইনিংস পর অর্ধশতক করা মুশফিক দুবার বেঁচে যান ভাগ্যের সহায়তায়। এক বার স্টেইনের বল স্টাম্পে আঘাত হানার পরও বেল পড়েনি। অন্য বার বল গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি ভিলাস। তবে বাংলাদেশের অধিনায়ক আউটের জন্য ভাগ্যকে দুষতেই পারেন। 

ডিন এলগারের বলে উইকেটরক্ষক ভিলাসের গ্লাভসবন্দি হন মুশফিক। রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ না থাকলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ৬৫ রান করা মুশফিকের ১২৫ বলের ইনিংসটি ৭টি চারে সাজানো।

সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসা দুমিনিকে নিজের উইকেট এক রকম উপহারই দেন লিটন দাস। অফ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে শর্ট মিড উইকেটে এলগারের সহজতম ক্যাচে পরিণত হন তিনি।

উইকেটে থিতু হয়ে আউট হন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সতীর্থদের মতো তিনিও পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। মর্কেলের বলে গালিতে এলগারের ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৫ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ সফরে এটাই মর্কেলের প্রথম উইকেট।

মুস্তাফিজ ও জুবায়ের ব্যাটিংয়ে খুব একটা ভালো নন, তবে নাসিরকে সঙ্গ দিতে পারতেন মোহাম্মদ শহীদ। স্টেইনের বলে তেড়েফুরে মারতে গিয়ে তিনি বোল্ড হলে সেখানেই দিনের খেলা শেষ হয়।

দিনের শেষ সেশনে ৯২ রান যোগ করতেই পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই সেশন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখলেও এই সেশনে মুঠি আলগা হয়ে গেছে স্বাগতিকদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুমিনি ও স্টেইন তিনটি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৮৮.১ ওভারে ২৪৬/৮ (তামিম ৬, ইমরুল ৩০, মুমিনুল ৪০, মাহমুদউল্লাহ ৩৫, মুশফিক ৬৫, সাকিব ৩৫, লিটন ৩, নাসির ১৩*, শহীদ ১; দুমিনি ৩/২৭, স্টেইন ৩/৩০, এলগার ১/২২, মর্কেল ১/৪৫)