নিপীড়কদের গ্রেপ্তার দাবিতে রোববার দুপুরে ছাত্র ইউনিয়ন নেতকর্মীরা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে তাদের উপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশ সদস্যরা বামপন্থি সংগঠনটির নারী কর্মীদেরও বেধড়ক পেটায়।
পুলিশের পিটুনিতে সংগঠনের অন্তত ৩৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক জানিয়েছে। এছাড়া পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের এ আচরণের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।
যৌন নিপীড়কদের না ধরে উল্টো ওই ঘটনার প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা করে পুলিশ নিপীড়কদের পক্ষ নিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
দুপুরে ডিএমপি কার্যালয়ের কাছে ওই ঘটনার পর বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন।
সংগঠনের সভাপতি হাসান তারেক বলেন, “ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা করেছে।
“এই হামলার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ প্রশাসনের নিপীড়কদের পক্ষ নেওয়ার বিষয়টি আরও পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে।”
পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেন তিনি।
এছাড়া সোমবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে ‘পাল্টা আঘাত’ কর্মসূচি হিসেবে দুপুরে ডিএমপি কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যান ছাত্র ইউনিয়নের শতাধিক নেতাকর্মী।
টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে একাধিক স্থানে বাধা পেলেও দুপুর পৌন ১টার দিকে তারা রমনায় ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের কাছে পৌঁছান।
সেখানে পুলিশ বাধা দেওয়ায় উভয়পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। জলকামান ব্যবহারের পাশাপাশি বেদম লাঠিপেটা করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তাদের রোষ থেকে রেহাই পায়নি ছাত্র ইউনিয়নের নারী নেতাকর্মীরাও।
আহত অন্তত দশজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এ সময় সংগঠনের পাঁচ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন রমনা থানা পুলিশের উপ-পরির্দশক মিজানুর রহমান।
আটকরা হলেন-ছাত্র ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল ও সদস্য আরিফুল ইসলাম অনিক, ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক রায়, অন্তু চন্দ্র নাথ ও সাদ্দাম হোসেন জয়।
রমনা থানার ওসি মসিউর রহমান বলেছেন, ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের ঢিলে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন- এসআই কামরুল, নায়েক জাহিদ, শাহীন, কাজী আরিফ, আলী হোসেন, আরাফাত।
পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ওই পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে বলে এসআই মিজানুর বলেছেন।
রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘নিপীড়ক নয়, প্রতিবাদকারীরাই টার্গেট’
ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিপেটা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে সিপিবি-বাসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে- নিপীড়করা নয়, নির্যাতনের প্রতিবাদকারীরাই এখন সরকারের টার্গেট।”
এ বিষয়ে সিপিবি-বাসদ বলেছে, “সরকার এখন নিপীড়কদের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, সরকারের অবস্থান নারীর বিপক্ষে এবং নারীর ওপর নিপীড়নের পক্ষে।”
বর্তমানে ‘সরকার কোনো প্রতিবাদই আর সহ্য করতে পারছে না’ মন্তব্য করে সিপিবি-বাসদ বলেছে, “গণদাবিকে অগ্রাহ্য করে, নির্যাতনের পথে গিয়ে কোনো সরকারই বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না।”
আটক ছাত্রনেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায় বামপন্থি দল দুটি।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সহযোগী সংগঠন ছাত্র মৈত্রী।
সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক অর্ণব দেবনাথ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অন্যায়ভাবে পুলিশি হামলা কোনো রকম গ্রহণযোগ্য নয়। যারা নারীদের সম্মান হরণে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশের এই হামলা ন্যাক্কারজনক।”
যৌন নিপীড়নের জড়িতদের পাশাপাশি ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের উপর হামলায় দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।