চবিতে গুলির নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগের ‘বহিষ্কৃতরা’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় সংগঠনেরই বিলুপ্ত কমিটির সদস্যরা গুলি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2014, 07:53 AM
Updated : 16 Dec 2014, 07:55 AM

এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন সরকার সমর্থক এ ছাত্র সংগঠনের একাধিক নেতা। 

গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের দুই পক্ষ ‘ভি-এক্স’ ও ‘সিএফসি’র সমর্থকরা।

‘ভি-এক্স’ এর নিয়ন্ত্রণাধীন শাহজালাল হল থেকে গুলি চালানো হলে ‘সিএফসি’ নিয়ন্ত্রিত শাহ আমানত হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়ানো তাপস সরকারের পিঠে গুলি লাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তাপস পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মারা যান। তাকে নিজেদের কর্মী হিসাবে দাবি করেছে ‘সিএফসি’।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় ‘ভি-এক্স’ এর পক্ষে অস্ত্র হাতে নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশা।

পুলিশ ও সিএফসি কর্মীদের দাবি, আশার নেতৃত্বে সশস্ত্র কর্মীদের ছোড়া গুলিতেই মারা গেছেন তাপস সরকার।

সিএফসির নেতা সুমন মামুন বলেন, “আশরাফুজ্জামান আশার নেতৃত্বে রুবেল দে, এনামুল হাসান অভি, সাহরিদ শুভ, প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়, জুবায়ের, রাশেদসহ ‘ভি-এক্স’র আট-দশজনের একটি দল গুলি করেছিল।”

সংঘর্ষের পর শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে যে ৩০ জনকে আটক করা হয় তাদের মধ্যে রুবেল ও রাশেদও রয়েছেন। 

তাপস সরকার

আর অস্ত্র আইনে করা পুলিশের মামলায় আশা, রুবেল ও রাশেদ যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ আসামি।

সুমন মামুন জানান, আশা ছাত্রলীগ থেকে গত বছর বহিষ্কার হন। তার বিরুদ্ধে অন্য মামলাও আছে।

সিএফসির আরেক নেতা অমিত কুমার বসু জানিয়েছেন, সংগঠনবিরোধী কাজ, শাটল ট্রেনে গোলযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রুবেল, দুর্জয় ও সাহরিদ বিভিন্ন সময়ে সংগঠন থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমেরও দাবি, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

ঘটনার দিন বিকালে সিদ্দিকী নাজমুল আলম তার ফেইসবুক পাতায় নিহত তাপসের ছবি পোস্ট করে মন্তব্য করেছেন, “তাপস রায়কে (শুরুতে এ নাম জানা গিয়েছিল) হত্যাকারী, ছাত্রলীগ থেকে পূর্বেই বহিষ্কৃতদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ক্ষমা করে দিও তাপস।” 

সিএফসি নেতা সুমন মামুন ওইদিনের ঘটনায় জড়িত ২৮ জনের একটি তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দেওয়ার দাবি করলেও এ ধরনের তালিকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন করেছেন উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ।

তিনি বলেন, “এ রকম তালিকার বিষয়ে কিছু জানি না। কারা জড়িত সেটা দেখতে হলে তো আমাকে ঘটনাস্থলে থাকতে হবে। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারাই ঘটনার কারণসহ সব অনুসন্ধান করে বের করবে।”

ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ কিংবা বহিষ্কৃতরা জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কে কখন কোন সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছে সেটা আমি কি করে বলি? তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়তো কেউ বহিষ্কার হয়েছিল।

“আমরা বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করি। তাদের বহিষ্কারের মেয়াদ হয়তো শেষ হয়ে গেছে।”

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার কে এম হাফিজ আক্তার বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আশার নেতৃত্বেই শাহজালাল হলের দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল। অন্য যে নামগুলো এসেছে সেগুলোর বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছি। ”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে। প্রশাসন কি করবে জানি না। তবে এসবের দায় আমরা নেব কেন?”