ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত ১, শাবি বন্ধ ঘোষণা

আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে একজন নিহত হওয়ার পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শাবি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 07:30 AM
Updated : 20 Nov 2014, 07:30 AM

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে ছাত্রদের এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সংঘর্ষ তদন্তে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের একটি কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা সংঘর্ষ চলার পর শিক্ষক সমিতি, প্রক্টোরিয়াল বডি ও প্রভোস্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন।

ক্যাম্পাসে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষই পরস্পরের দিকে গুলি ছোড়ে এবং বোমাবাজি করে। আহত হন অন্তত ২০ জন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হন গুলিবিদ্ধ।

নিহত সুমন চন্দ্র দাস সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সুমনকে হাসপাতালে আনা হলে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।"

অঞ্জন রায়ের সমর্থক হিসাবে পরিচিত সুমনের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। বাবার নাম হীরাধন চন্দ্র।

পায়ে ও পেটে পুলিশের রাবার বুলেট লাগার পর প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তীর সমর্থক নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে। সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের সমর্থকরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা ক্যাম্পাসে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও অ্যাকাডেমিক ভবন এবং শাহপরাণ হলে ভাংচুর চালায়।

এক পর্যায়ে শাহপরাণ, বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি অঞ্জন রায় সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় দুই পক্ষের কর্মীদের হাতেই রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। কয়েকজনকে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। দুই পক্ষেই অস্ত্র হাতে বেশ কয়েকজন বহিরাগতকে দেখা যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ ক্যাম্পাসে এলে ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এ সময়  সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে চলে যান। আর সহসভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন শাহপরাণ হলে।  
পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা হলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।

উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করছি। সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেছি।”

বেলা পৌনে ১২টার দিকে আবার দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর দুই দফা ক্যাম্পাসে গুলির শব্দ শোনা যায়।

সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে যান প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের ডেপুটি চিফ জাহিদুল ইসলাম জানান,  প্রক্টরের পেটে ও পায়ে পুলিশের রাবার বুলেট লেগেছে। দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আরো কয়েকজনকে।

গুলিবিদ্ধ দুইজনের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র খলিলুর রহমান। তিনি ছাত্রলীগ নেতা অঞ্জনের সমর্থক হিসাবে পরিচিত। অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।

সভাপতিপক্ষের হিসাবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সবুজ বলেন, “অঞ্জনের লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেছে। তাদের গুলিতে আমাদের অন্তত চারজন আহত হয়েছে। আঘাত পেয়েছে আরো অন্তত ১৫ জন।”  

অন্যদিকে অঞ্জনের পক্ষের লোকজন হামলার জন্য সঞ্জীবন সমর্থকদের দায়ী করেছেন।

সংঘর্ষ শুরুর আগে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ভাংচুর চালালে পুলিশ নীরব ছিল- শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রহমতুল্লাহ বলেন, “প্রশাসন আমাদের কাছে যতোটুকু সহযোগিতা চেয়েছে তা আমরা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না চাইলে আমরা ফোর্স ব্যবহার করতে পারি না।”

জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বেলা ২টার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি এখন শান্ত।  আমরা সতর্ক রয়েছি। ক্যাম্পাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।

বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনুছ ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

এছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

</div>  </p><p> <div class="embed"> <iframe height="315" src="https://www.youtube.com/embed/iEo4QNxZcsk" width="420"/> </div>  </p>