বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের পর উপাচার্য আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের জানান, শাহজালাল ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ পরে জানানো হবে।
এর কিছুক্ষণ পর উপাচার্যের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমীন হক।
ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা ইস্তাফা দিলে হাজারখানেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এবং পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য দুই শিক্ষককে অনুরোধ জানায়। উদ্যোগ নেয়া হয় শিক্ষক ও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও।
বুধবার দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর অধ্যাপক জাফর প্রশাসনিক ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের বলেন, “সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে আমাদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্যে অনুরোধ করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকেও আমাদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে।
“সবার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই আমরা আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুখে, দুঃখে, আনন্দে, কষ্টে একসাথে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আর তার স্ত্রী ইয়াসমীন হক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স স্কুলের ডিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক।
তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।
ইয়াসমীন হক শিক্ষার্থীদের বলেন, “তোমাদের ছেড়ে আমরা যেতে পারি? কখনো না। তোমাদের সঙ্গে আমরা এই ক্যাম্পাসেই থাকব।”
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে এবার প্রথমবারের মতো একপ্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৩০ নভেম্বর এ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ করেই সিলেটে ‘সমন্বিত পরীক্ষার’ বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, একসঙ্গে পরীক্ষা হলে সিলেটের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবে। পাশাপাশি সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটাও দাবি করেন তারা।
এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক থেকে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে। এরপর সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র জমা দেন জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক।
ওই সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে জাফর ইকবাল বলেন, “আমরা পুরোপুরি অবিশ্বাস ও বিস্ময় নিয়ে আবিস্কার করলাম, বামপন্থী ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে এর বিরোধিতার সূচনা করল এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি অন্যরা গ্রহণ করল।
“মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যখন এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন- তখন আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের সবকিছু নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।”
তাদের পদত্যাগের খবর জানার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারখানেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে দুই শিক্ষকের সিদ্ধান্ত বদলানোর দাবি জানাতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষকও উপাচার্য আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করে এর বিহিত করার দাবি জানান।
দুই শিক্ষকের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তারা সব কিছু ‘সুন্দর’ করার চেষ্টা করবেন।
আর অধ্যাপক জাফর ইকবালের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী।
রাতেই দুই জনের সঙ্গে বৈঠক করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান উপাচার্য। এরপর জাফর ইকবালও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
এরপর বুধবার সকালে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল পিছু হটলে অধ্যাপক জাফরও থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।
এক লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি একটি অপূর্ব ভর্তি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটিতে কেউ বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভবিষ্যতে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে আমরা সেটা আশা করে আছি।”
কীভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে তার খুঁটিনাটি সবাইকে বিশ্লেষণ করারও অনুরোধ জানান তিনি।