রোববার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “২০১৪-১৫ সেশন থেকে ক্লাস্টার বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। এবার পুরাতন পদ্ধতিতেই শিক্ষা ভর্তি করা হবে।”
ইউজিসি চেয়ারম্যান জানান, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর বিষয়ে সভায় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্রা একমত হয়েছেন। এজন্য একটি নীতিমালা তৈরীতে উচ্চ শিক্ষা মান উন্নয়ন প্রকল্পের (হেকাপ) কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ বছর যশোর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পাইলট ভিত্তিতে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
“যেহেতু এবার আমাদের হাতে এবার খুব সময় নেই। কিছু দিন পরেই উচ্চ মাধ্যমিকের ফল দিয়ে দেবে তাই এবার আগের নিয়মেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যায় সে বিষয়ে একটি গবেষণা হয়েছে তথ্য দিয়ে অধ্যাপক আজাদ বলেন, আমরা ওই গবেষণাকেই আরো রিফর্ম করব। কীভাবে আরো ভালোভাবে ভর্তি কার্ক্রম সম্পন্ন করা যায় সি বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
“ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ভর্তি কার্ক্রম শুরু করলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার উপর থাকবে, সেটাকে কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানকার জনবলের বিষয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে। সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে এগুলো চূড়ান্ত করা হবে।”
“আমরা আশা করছি এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্লাস্টার বা এ ধরনের অন্য কোনো পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারব।”
একই শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই ভর্তি পরীক্ষায় আওতায় শিক্ষার্থী ভর্তি করানোই হবে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ফলের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম অনুসারে অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে ভর্তি হতে পারবে।
বর্তমানে দেশের সব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাককদের ভোগান্তি কমবে। এছাড়া টাকাও কম খরচ হবে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্রা জানিয়েছেন।
তবে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে তাদের আপত্তি তুলে ধরেছে বলে সভায় উপস্থিত একজন উপাচার্য জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি কমিটি, পাঁচটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি এবং চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি কমিটি করার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি কমিটি গঠনের বিষয়েও অনেকেই সুপারশি করেছেন বলে জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে নেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে অনুষদভিত্তিক চার থেকে পাঁচটি পরীক্ষা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে হতে পারে।
এছাড়া ক্লাস্টার পদ্ধতিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে নেয়া হতে পারে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সভায় শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ছাড়াও ৩১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপস্থিত ছিলেন।