রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

পুলিশের সঙ্গে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2013, 05:01 AM
Updated : 20 April 2013, 07:29 AM

শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর দুপুরে সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জলিল মিয়া জানান।  

তিনি বলেন, “বৈঠকে ছয় শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।”

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-শিক্ষক আহত হওয়ার ঘটনায় ৭ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে আন্দোলনকারীরা।

ছয় শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সকালে ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে সমাবেশ শুরু করে।

বেলা ১১টার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপর তারা লাঠিপেটা শুরু করে। এতে পাঁচ শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ার পর তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তখন বাধ্য হয়েই আমরা লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেই।”

উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরুর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ এর আহ্বায়ক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের সদস্য সচিব ড. তুহিন ওয়াদুদ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আপেল মাহমুদ, প্রভাষক ওমর ফারুকসহ সহকারী নিবন্ধক আমিনুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক মামদুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

এর প্রতিবাদে ওই দিন বিকালেই উপাচার্যের বাস ভবন ঘেরাওযের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাস ভবনের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় পুলিশ হঠাৎ করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে এবং নির্বিচারে লাঠিপোটা শুরু করে।”

সংঘর্ষে আহত পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল আলম, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শফিক আশরাফ, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস প্রামানিক, সহকারী প্রক্টর শামীম আল মতিন ও সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমানকে আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ এর আহ্বায়ক ও গণিত বিভঅগের সহযোগী অধ্যাপক আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে আগামী ৭ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে শিক্ষার্থীরা।” 

এদিকে সংঘর্ষের সময় উপাচার্যের বাসভবনের কাছ থেকে রাজিব হোসেন নামে এক যুবককে দুটি হাতবোমাসহ আটক করা হয় বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান।

ছাত্রলীগ কর্মী রাজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এসিড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি বলে জানান তিনি।

থমথমে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।