ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কর্মীদের ছাত্রলীগের ধাওয়া

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিতে আসা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2017, 09:38 AM
Updated : 10 August 2017, 05:17 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মধুর ক্যান্টিনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের পিটুনিতে ছাত্রদলের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক ওমর ফারুক মামুন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি দল বেলা ১১টার দিকে ডাকসুর সামনে জড়ো হয়।

বেলা পৌনে ১২টার দিকে তারা মধুর ক্যান্টিনের দিকে এগোতে শুরু করলে ছাত্রলীগের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী ও এস এম হল শাখার সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে।

পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে মেহেদী ও বাশার দৌড় দিলে বাকিরাও তাদের অনুসরণ করে। পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চারুকলা অনুষদের সামনে সোহওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট গেইট ও শাহবাগে দিক দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

এ সময় ছবি হাট এলাকায় ছাত্রদলের নেতা ওমর ফারুক মামুন মারধরের শিকার হন।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাকসুর দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেছে। শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণে আমরা ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম সংহতি জানাতে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জহিরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে তারা ৫০ জনের মত ডাকসুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে মধুর ক্যান্টিনের দিকে এলে জিজ্ঞেস করলাম তারা কারা। বলল যে তারা ছাত্রদল।

“ছাত্রত্ব নাই, তারপরও ক্যাম্পাসে কেন- এই প্রশ্ন করতেই তারা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের দিকে দৌড় দেয়। পরে মসজিদের সামনে গিয়ে স্লোগান ধরলে তাদের ধাওয়া দেই।”

ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়নকারী মাসুদ আল মাহাদী বলেন, উন্মুক্ত আলোচনায় অংশে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রত্যেক সংগঠন থেকে তিনজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে বলা হয়েছিল।

“কিন্তু ছাত্রদল অনেক নেতাকর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউনের মতো করে উপস্থিত হয়েছিল। যেহেতু আমন্ত্রণ পেয়ে তারা এসেছিল, ধাওয়া করাটা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঠিক হয়নি।”

মাহাদী বলেন, ছাত্রলীগকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা আলোচনায় যায়নি।

“এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করল যে, মুখে ডাকসু নির্বাচনের দাবি করলেও, নির্বাচন তারা চায় না।”

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছিল, তাই ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের বাধা দেয়।”

ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনরতদের কাছ থেকে কোনো আমন্ত্রণ পাননি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে ডাকসুর আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেই। তাদের উন্মুক্ত আলোচনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়নি, ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীও সেখানে যায়নি বলে শুনেছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবিতে বেশ কয়েকবার নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আর হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ডাকসু নির্বাচন করার তাগিদ দিয়েছেন, হাই কোর্ট এ বিষয়ে রুলও জারি করেছে; কিন্তু নির্বাচন হয়নি।