ঢাবি ভিসি নির্বাচনের সিনেট সভা বর্জন করছে সাদা দল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন বর্জন করতে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2017, 09:10 AM
Updated : 28 July 2017, 09:10 AM

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়া আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে শনিবার তিনজনের উপাচার্য প্যানেল নিবার্চন করবেন সিনেট সদস্যরা।

নিবার্চনের একদিন আগে সিনেটের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিসহ ৫০টি পদ শূন্য থাকায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বিশেষ অধিবেশন বর্জন করার কথা জানান সাদা দলের আহ্বায়ক আখতার হোসেন খান।

শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের তিনি বলেন, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অসম্পূর্ণ সিনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াকে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য বলে মনে করি না।

সিনেট সভা স্থগিত করে অবিলম্বে রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনসহ অন্য ক্যাটাগরির শূন্যপদ পূরণের পর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আখতার হোসেন খান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০৫ জন। কিন্তু বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৫৫ জন। বাকি ৫০টি পদ শুন্য রয়েছে, যেখানে ২৫ জন সদস্য রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার কথা।”

১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতন্ত্রের সূতিকাগার অভিহিত করে তিনি বলেন, “তাই সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত প্যানেল হতে উপাচার্য নিয়োগ লাভ করুক এটা আমাদের প্রত্যাশা। সিনেটের প্রায় অর্ধেক সদস্যপদ খালি রেখে বিশেষ করে রেজিস্টার্স গ্রাজুয়েটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি পদ খালি রেখে একটি অসম্পূর্ণ সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন কারো কাছেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটকে কার্যকর রাখা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী বডি। কিন্তু যথা সময়ে সিনেটের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন না দিয়ে এবং অন্যান্য শুন্যপদ খালি রেখে এ সিনেটকে অনেকাংশেই অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে।”

১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্যরা ভোট দিয়ে তিনজনের একটি উপাচার্য প্যানেল ঠিক করেন, তার মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বা রাষ্ট্রপতি।

এই উপাচার্য নির্বাচনের সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক গত ১৬ জুলাই সিনেট সদস্যদের চিঠি দেওয়ার পর রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন না করার কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন আওয়ামী নীল দলের শিক্ষককের একটি গ্রুপ।

এতে সিনেট সভার ওপর হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার আদালতে গেলে তা স্থগিত হয়ে যায়। বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩০ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করে দেন চেম্বার বিচারপতি।

চেম্বার আদালতের এ আদেশের ফলে সিনেট সভা করতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এই প্রেক্ষাপটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে হতে যাওয়া সিনেট অধিবেশন বর্জনের সিদ্ধান্ত জানালেন সাদা দলের শিক্ষকরা।

অধ্যাপক আখতার হোসেন খান বলেন, চার বছর আগেও অনির্বাচিত উপাচার্যের দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হওয়ার পর যখন ২০১৩ সালে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হয় তখনো রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিসহ অন্য ক্যাটাগরিতেও অনেক সদস্যপদ শুন্য ছিল। এর প্রতিবাদে আমরা উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য আহুত সিনেট অধিবেশ বর্জন করেছিলাম। এবারও একই পুনরাবৃত্তি ঘটায় আমরা আগামীকালের সিনেট অধিবেশন বর্জন করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মার্কেটিং বিভাগ অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, পরিসংখ্যান, প্রাণপরিসংখ্যান ও তথ্যপরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।