তথ্য জানানোর পাশাপাশি আলাপেও ‘ডিইউ মামাবট’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনা-নেওয়ায় ব্যবহৃত বাসের সময়সূচি, ছাড়বার স্থান, স্টপেজ, যাত্রাপথের দূরত্ব থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সহায়তার জন্য চালু হয়েছে ফেইসবুক মেসেঞ্জার ভিত্তিক চ্যাটবট- ‘ডিইউ মামাবট’।

রিফাত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2017, 09:38 AM
Updated : 8 July 2017, 02:23 PM

আলাদা ‘ঝুট-ঝামেলা’ ছাড়াই শুধু ফেইসবুকে মেসেজ পাঠিয়ে সহজে ও চটজলদি বাসের সময় জেনে নিতে পারছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা, ফলে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার চারদিনের মধ্যেই ডিইউ মামাবট প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে দাবি নির্মাতাদের।

৩ জুলাই চালু হওয়া চ্যাটবটটি যাত্রা শুরুর তৃতীয় দিনেই পেয়েছে ৭৭ হাজার ৯৩৩টি হিট (কল), এরই মধ্যে দৈনিক গড়ে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ব্যবহার করছে এটি।

পণ্য ও সেবা গ্রাহকের কাছে সহজেই পৌঁছে দিতে চ্যাটবটের ব্যবহার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হলেও বাংলাদেশ এই প্রযুক্তির ব্যবহার সেভাবে ‘নেই’ বলে জানান ডিএউ মামাবটের ডেভেলপার মেহেদী হাসান ও আজিজুল হাকিম।

ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই দুই শিক্ষার্থী জানান, বাংলাদেশে চ্যাটবট নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি, তাই একদম শখের বশেই আমরা ২০১৭ সালের শুরুতে ডিইউ মামাবট ডেভেলপ করা শুরু করি।

“দেশের প্রথম চ্যাটবট হিসেবে রক্ত সংক্রান্ত তথ্য প্রদানকারী ‘ব্লাডবট’ পরিচিত হলেও শুধু প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এটি। অন্যদিকে ডিইউ মামাবটের সাথে আলাপচারিতাও করা যাবে,” বলেন মেহেদী।

‘ছোটখাটো’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট দেশে এটিই প্রথম এমনটাই দাবি তার।

ডিইউ মামাবট কী?

চ্যাটবট কথোপকথনের একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যা বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে নেয়। অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম যেমন, ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি মাধ্যমে কাজ করে এটি।

মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটিবন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট যেভাবে করি… সেই একই জিনিস, শুধু তফাৎ হচ্ছে জবাবটা মানুষ না দিয়ে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম দেবে।”

“ডিইউ মামাবট ফেইসবুক চ্যাটবট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কাজ করে। এটি ছোটখাটো একটি এক্সপার্ট সিস্টেম।”

আজিজুল হাকিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবাই যাতে ব্যবহার করতে পারে সে কথা মাথায় রেখেই আমরা অ্যাপের বদলে চ্যাটবট তৈরি করেছি। এটিকে আপডেট করতে হবে না।

“আমরা কম-বেশি সবাই ফেইসবুক ব্যবহার করি। এই চ্যাটবট ফেইসবুকের একজন বন্ধুর মতো পাশে থাকবে এবং যে কোনো সময় বাস সংক্রান্ত সব তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।”

যা জানাবে ডিইউ মামাবট

ডিইউ মামাবটের ডেভেলপার আজিজুল হাকিম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের আপ-ডাউন সময়, পরবর্তী বাস ছাড়বার সময়, কত মিনিট বাকি আছে, বাস স্টপেজ, সবচেয়ে কাছের স্টপেজ, যাত্রাপথ (গুগল ম্যাপে লোকেশনসহ) যাবতীয় তথ্য দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীদের ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাম্পাস যাতায়াতের সুবিধার জন্য পুরো ঢাকায় ১৩টির বেশি বাস সার্ভিস রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সময়সূচি থেকে জানা যায়, ছুটির দিন বাদে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যাম্পাসে আসতে বাসের ট্রিপ সংখ্যা ৪৫টি, অন্যদিকে ক্যাম্পাস ছেড়ে যায় ৪৯টি ট্রিপ। বাসগুলো দেড়শর বেশি স্টপেজে ছাত্রছাত্রী উঠা-নামা করে।

এসব তথ্যের জানানোর পাশাপাশি বটের সঙ্গে আলাপচারিতাও চালাতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

“আমরা এই বট চালুর পর দেখতে পাই- সবাই শুধু বাসের সময় জানতে নয়, আলাপ ও মজা করতেও মেসেজ করেন বটকে,” বলেন আজিজুল।

চালুর প্রথম সপ্তাহেই জনপ্রিয়তা

আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার এক সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই ডিইউ মামাবটের ফেইসবুক পেইজের ফলোয়ার দুই হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে, পেইজটির রেটিং চার দশমিক আট।

সাড়ে ৪৯ হাজার সদস্যের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপের সদস্য আলি রিমন বলেন, “অনেক অনেক ধন্যবাদ যারা এটি তৈরি করেছেন। এখন আর বাসের সময় জানার জন্য পরিবারে পোস্ট করা লাগবে না। ডিইউ মামাবটই বলে দেবে সব। সাথে একটু মজা করতে চাইলে তাও পারবেন, আপনাকে হাসানোর জন্য মামাবট প্রস্তুত...।”

ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের হিমেল খান লিখেছেন, “যারা এটি তৈরি করেছেন, তাদেরকে সাধুবাদ। বাসের সময়সূচি জানা যায়, চাইলে সাথে আমার মতন একটু ফানও করতে পারেন...।”

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং অ্যাপলের ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট সার্ভিস ‘সিরি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিইউ মামাবট বানানো হয়েছে বলে জানান আজিজুল হাকিম।

ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মামুনুর রশীদ ডিইউ মামাবট সম্পর্কে বলেন, “খুব সুন্দর কাজ হয়েছে, আর এটার কথা বলার ধরনও বেশ মজাদার। আমি যখন শিক্ষার্থী ছিলাম তখন বাসের সময় জানাবার জন্য এত ইউজফুল কিছু ছিল না।

“দেশের রেস্তোঁরা, ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস, সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি অফিসের কাজের সহায়তার জন্যেও চ্যাটবট ব্যবহার যেতে পারে।”