জাহাঙ্গীরনগরের হল খুলবে ৮ জুন

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর বন্ধ করে দেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল আগামী ৮ জুন খুলে দেওয়া হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2017, 02:20 PM
Updated : 3 June 2017, 02:20 PM

তবে হল খুলে দেওয়া হলেও ঈদুল ফিতরের পর ৯ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাস  শুরু হবে।

শনিবার এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক।

সিন্ডিকেটের এই বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দাবি পূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও বৈঠক শেষে তিনি জানান।  

গত ২৬ মে বাস চাপায় দুই ছাত্র নিহতের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর ২৮ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।    

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “হল খুললেও ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে ঈদের পরে ৯ জুলাই। নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সাপ্তাহিক কোর্সগুলিও (উইকেন্ড) এই সিদ্ধান্তের আওতাধীন থাকবে।”

হল খোলার আগে ৮ জুনের মধ্যে নিহত দুই ছাত্রের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি পূরণ করা হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার।   

“সিন্ডিকেটের অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে নিহত দুই ছাত্রের পরিবার থেকে একজন করে সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকা থেকে বিশমাইল এলাকা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় গতিরোধক নির্মাণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ।”

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আট দফার মধ্যে অন্যতম তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিন্ডিকেট কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের সংবাদ সম্মেলন

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনরত ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’ সংবাদ সম্মেলন করেছে ।

শনিবার সিন্ডিকেট সভা শেষ হওয়ার পরপর দুপুরে কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলন থেকে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা নাগ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।

ঐক্যমঞ্চের দাবির মধ্যে রয়েছে- আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, আবাসিক হল খুলে দেওয়া, পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন এবং গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রক্টরের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার জবাবদিহিতা।

ঐক্যমঞ্চের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক শামছুল আলম, অধ্যাপক এ এ মামুন, অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন এবং সহযোগী অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৬ মে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাস চাপায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান রানা এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্র আরাফাত হোসেন।

প্রতিবাদে ২৬ মে এবং ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ২৭ মে বিকালে পুলিশের লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হয়। পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ আহত হয় ১০ শিক্ষার্থী।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়।

রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সব শিক্ষার্থীকে রোববার সকাল দশটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

ওই রাতেই আশুলিয়া থানা পুলিশ উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে থাকা ১০ ছাত্রীসহ আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন বিকালে ওই শিক্ষার্থীরা জামিনে মুক্তি পান।