‘নতুন রংয়ে রাঙার দিনে’ ঢাবি হিসাব বিজ্ঞানের সাবেকরা

চেনা ক্যাম্পাসে পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে চেনা হৃদ্যতায় আর সিনিয়র-জুনিয়র গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠে স্মৃতি মেলে ধরার আন্তরিকতায় সময় পার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 11:48 AM
Updated : 24 March 2017, 01:10 PM

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রাঙ্গণে এ মিলনমেলার আয়োজন করে অ্যাকাউন্টিং অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন; পরিবার-পরিজন নিয়ে সাবেকদের অংশগ্রহণে যেটা ছড়ায় নানান রংয়ের আবেশ।

তাইতো অ্যালামনাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলতে পারেন, “আমরা যে ক্যাম্পাসে বেড়ে উঠেছি, সেখানে আমরা আবার জড়ো হয়েছি নতুনভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে। আজতো আমাদের নতুন রংয়ে রাঙানোর দিন।”

সকাল সাড়ে ১০টায় উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতার আগেই সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে টিএসসি প্রাঙ্গণ। আনুষ্ঠানিকতায় এসে টিএসসির মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন আর বেলুন ও পায়রা ওড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

১৯৮৫-৮৬ সালে একই ব্যাচে পড়তেন রফিকুল ইসলাম ও রফিকউদ্দিন, নামের এই মিল নিয়ে তাদের হলের সংযুক্তিও পড়ে সূর্যসেনে। পেশার ক্ষেত্রে মিল নিয়ে রফিকুল ইসলাম শিক্ষকতা করেন পিলখানার মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজে আর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে পড়ান রফিকউদ্দিন।

তাদের পুরোনো সেই বন্ধুত্ব এখনো অটুট, একসঙ্গে পুনর্মিলনীতে এসে টিএসসি প্রাঙ্গণে খোশগল্পের সময় কথা হয় এ দুই সাবেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

রফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একই বিভাগে পড়তাম, একই হলে থাকতাম। এখন আবার এখন এখানে এসে একসাথে। প্রতিবছর এমন পুনর্মিলনী আমাদের মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।”

তিনি বলেন, “আমরাতো পুনর্মিলনীতে আসার জন্য বন্ধুরা একটা মিটিংও করেছি। আমাদের ব্যাচের ৬০ শতাংশ সাবেক অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তাদের অধিকাংশই এসেছে আজকে।”

পৌনে ১১টার দিকে টিএসসি অডিটোরিয়ামে হয় উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠান, যেটা সাবেক শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের বক্তৃতায় রূপ নেয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে।

সেখানে সম্মাননা দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত ১০ জন সাবেক শিক্ষার্থীকে।

উদ্বোধন করে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের এ সময়ে বড় সঙ্কট মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে। মানুষের মধ্যে সম্পর্ক না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষা সেভাবে কাজে লাগছে না।

লন্ডন, নিস, ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের হামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “প্রশ্ন আসে, তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের এতো কাছাকাছি নিয়ে আসলেও এতো হিংসা-বিদ্বেষ কেন? কেন মানুষ মানুষকে হত্যা করছে?

“দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তিগত পরিচয় নাই, কোনো পূর্বশত্রুতা নাই- তবুও হত্যা করা হচ্ছে। এ কারণে সর্বাগ্রে দরকার মানব সম্পর্কে উন্নয়ন।”

সেই সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য এই পুনর্মিলনী ভূমিকা রাখবে মন্তব্য করে উপাচার্য বলেন, “যে সময় নিজেরা পার করেছেন সেটা ভাগাভাগির জন্য এ আয়োজন। নিজেদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য এ আয়োজন। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি না করলে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করব কীভাবে।”

‘অ্যাকান্টিং’ দিয়ে ‘অ্যাকাউন্টিবিলিটি’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে সাবেক শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বক্তব্য দিতে গিয়ে কমার্স বিভাগ থেকে কমার্স ফ্যাকাল্টি করার ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের আন্দোলন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “৪২ বছর অস্ট্রেলিয়ায় থাকার পর বাংলাদেশে এসে আমি এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আজ মনে হচ্ছে নিজের বাড়িতে এসেছি। আমি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছি, সেটাকে যদি ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারি সেটাই হবে আমার দেশের জন্য কিছু করা।”

বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক শান্তি নারায়ণও তার শিক্ষা ও শিক্ষকতা জীবনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “বলা হয়ে থাকে শিক্ষার মান খারাপ হয়ে গেছে। আমি সেটা মনে করি না, বরং কেউ বললে তাতে ডিফেন্ড করি। শিক্ষার মান যে ঠিক আছে তার বড় প্রমাণ হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখানকার ভিত্তি নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারছে।”

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকাউন্টিং অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একেএম কামরুল ইসলাম জানান, সংগঠনের ১৭০০ সদস্যের মধ্যে একটি বড় অংশ পরিবার-পরিজন নিয়ে এ পুনর্মিলনীতে অংশ নিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল ‍উদ্দিন, গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খান, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মজিবউদ্দিন আহমেদ, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হাকিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, পুনর্মিলনী আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বক্তব্য দেন।
মিলনায়তনের ভেতরে যখন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল তখন টিএসসির মাঠ মুখর সাবেকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিভিন্ন রকমের খেলাধুলায়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় রংতুলির খেলায় মাতে শিশুরা।

মধ্যাহ্নভোজনের পর বিকেলে চলে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে, সন্ধ্যার আয়োজনে রয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

পুনর্নিমলনী ঘিরে টিএসসি প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। সেখানে রয়েছে বড় বিলবোর্ডে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ প্রাঙ্গণ পেছনে রেখে কিংবা ফেইসবুক প্রোফাইলের আকারে তৈরি বোর্ডে ছবি তোলার সুযোগ।