পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিটেই এসএমএসে উত্তর, ১৩ জনের দণ্ড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তায় (এসএমএস) জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে আসা উত্তর দেখে দাগানোর অভিযোগে ১৩ শিক্ষার্থীকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2016, 03:19 PM
Updated : 21 Oct 2016, 03:20 PM

তবে জালিয়াত চক্র পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে এই প্রশ্ন কিভাবে-কোথা থেকে পেয়েছে এমন প্রশ্নে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের মাধ্যমে যেতে পারে বলে সন্দেহের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের ৮৭টি কেন্দ্রে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয়। এই ইউনিটের অধীন বিভিন্ন বিভাগের এক হাজার ৭৪৫টি আসনের বিপরীতে এবার পরীক্ষা দিয়েছেন ৯০ হাজার ৪২৭ জন।

এবারের পরীক্ষার সময় মোবাইল ফোনের এসএমএস ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ১৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী।

তিনি বলেন, পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে প্রত্যেককে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ভবন কেন্দ্র থেকে আল ইমরান, ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে ইমরান খান সুজন ও সাবিয়া ইসলাম নওরীন, সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজ থেকে আকাশ খন্দকার, নিউ মডেল কলেজ কেন্দ্র থেকে জাহিদ হাসান ও আইডিয়াল কলেজ কেন্দ্র থেকে তারিক চৌধুরী,

এছাড়া ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ থেকে অবণী রায়, বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে মাহমদুল হাসান তারেক, মতিঝিল আইডিয়াল কেন্দ্র থেকে শাহ সাদমানী ইয়াসার, বাওয়ালি কলেজ থেকে আল-আমিন, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে ইশতিয়াক আহমেদ ও জুলকার নাইন নির্ঝর এবং মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সঞ্চিতা রানী দাশ।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরীক্ষায় জালিয়াতি করায় পাবলিক পরীক্ষা আইন-১৯৮০ এর ৯ (খ) অনুযায়ী ওই ১৩ জন শিক্ষার্থীকে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে আটক শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “পরীক্ষা শুরু হওয়া ২০ মিনিটের মধ্যে মোবাইলে এসএমএস আসে। বহুনির্বাচনী এই পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক অপশনগুলো শুধু পাঠানো হয়েছিল।”

জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে এসএমএসে উত্তর পেতে এলাকার রুবেল নামে ‘এক ভাইয়ের’ সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জানিয়ে তাকে ছাড়া আর কাউকে চেনেন না বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।

পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাওয়ায় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতো নিচে নামবে না। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যারা তৈরি করেন, তারা শুধুমাত্র পরীক্ষার আগের দিনে প্রশ্নপত্র তৈরির আগেই ডাক পান। আবার প্রিন্টের সময় যে শিক্ষক থাকেন, তিনিও শুধু প্রশ্ন প্রিন্ট করার ঘণ্টা খানেক আগে জানতে পারেন যে তিনি প্রশ্নপত্রের দায়িত্বে।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলো থেকে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দেওয়া পর বাইরে যায় এটা আমরা মনে করছি। এটার সঙ্গে শিক্ষক- কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে।”

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধে প্রশ্নপত্রে গোপন কোড (বার কোড) চালু করা হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আমজাদ বলেন, “কিন্তু জালিয়াত চক্র নতুন কৌশল প্রয়োগ করেছে। এখন শুদ্ধ অপশনটি মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে।

“ক্যাম্পাসে ভেতরের কেন্দ্রগুলোয় মেন্টাল দিয়ে চেক করা হলেও বাইরে কেন্দ্রগুলোতে সেরকম চেকিং করা হয় না অনেক সময়। তাৎক্ষণিকভাবে জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব নয়, তবে সর্তক থাকতে হবে, আমাদের ভাবতে হবে।”

জালিয়াত চক্রের মূল হোতাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলেও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর।

গত কয়েক বছরের মত এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যাকলয়ের ভর্তি পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা যোগাযোগ করা যায় এমন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ।

পরীক্ষার হলে অনিয়ম ও জালিয়াতিসহ যে কোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থাও ছিল।