রিশার জন্য ফের রাস্তায় উইলসের শিক্ষার্থীরা

বেঁধে দেওয়া সময়ে ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার খুনি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে তার সহপাঠী ও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 10:00 AM
Updated : 30 August 2016, 05:00 PM

মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত কাকরাইল মোড় ঘিরে এই বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের এই অবস্থানের কারণে নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল চার্চ এবং শান্তিনগর চৌরাস্তা থেকে কাকরাইলের দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আশপাশের সড়কগুলোয় যানজট লাগে; দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।

সোমবার উইলসের শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে অবস্থান নেওয়ার পর আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। একাত্মতা জানিয়েছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও।

পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও পুলিশের রমনা জোনের ডিসি শিবলি নোমানের কাছ থেকে রিশার খুনিকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস পেয়ে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে রাস্তা থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার কাকরাইলে আন্দোলনে থাকা জান্নাতুল ফেরদৌস ফিজারা নামের এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিশাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না, আমরা চাই এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন মেয়েদের ক্ষতি করতে না পারে।”

ছাত্রীদের নিরাপত্তায় সব স্কুলের সামনে পুলিশ মোতায়েনেরও দাবি জানান প্রতিষ্ঠানটির দ্বাদশ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের অবরোধে ছিলেন রিশার বাবা রমজান হোসেনও। ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত খুনিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পুলিশসহ সবার সহযোগিতা চাই।”

ইমরান বলেন, “রিশার সহপাঠীরা অপরাধী সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় করে পুলিশকে দিয়েছে। এরপরও তাকে ধরতে না পারা পুলিশের ব্যর্থতা।”

অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রিভন ইসলাম জানান, খুনির বিচার দাবিতে তাদের আন্দোলন চলবে।

“পুলিশ যদি খুনিকে ধরতে না পারে তাহলে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে। আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”

জামায়াতের হরতালের কারণে বুধবার রাস্তায় কোনো কর্মসূচি থাকবে না। তবে উইলস প্রাঙ্গণে রিশার জন্য শোকসভা হবে বলে জানিয়েছে তার সহপাঠীরা।

পরে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার দুপুরে স্কুলের সামনের ফুটওভারব্রিজে এক যুবক রিশার পেটে ও হাতে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। তিনদিন পর রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

১৪ বছর বয়সী রিশা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ‘বি’ শাখায় পড়ত।

রিশার মা তানিয়া বেগমের বরাত দিয়ে পুলিশের ভাষ‌্য, কয়েক মাস আগে ইস্টার্ন মল্লিকার বৈশাখী টেইলার্সে একটি জামা বানাতে দিয়ে যোগাযোগের জন্য সেখানে তিনি নিজের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন।

ওবায়েদ নামে দোকানটির এক কর্মচারী ওই নম্বরে ফোন করে প্রায়ই রিশাকে বিরক্ত করতেন। পরে রিশার মা ওই সিমটি বন্ধও করে দিয়েছিলেন। তানিয়া বেগমের ধারণা, ওবায়েদই রিশাকে ছুরি মেরেছেন। ওবায়েদকে আসামি করে রমনা থানায় মামলাও করেছেন তানিয়া বেগম। 

ওবায়েদকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রমনার ওসি মশিউর রহমান। ওবায়েদের বোন ও ভগ্নিপতিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় মঙ্গলবার আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর বলেন, “আমাদের একাধিক টিম মাঠে আছে। আমরা নিশ্চিত, খুব তাড়াতাড়ি খুনিকে গ্রেপ্তার কতে পারব।”