জগন্নাথে আন্দোলনে বিভাজন, ‘মারধরে’ ছাত্রলীগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের ‘হামলার’ পর আলাদা কর্মসূচির ডাক এসেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 10:29 AM
Updated : 29 August 2016, 10:40 AM

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ‘হল পুনরুদ্ধার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে অনশনের কর্মসূচি দিয়েছে।

অন্যদিকে ‘ছাত্রলীগের হামলায়’ ক্যাম্পাসে জড়ো হতে না পেরে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছে। এই ব্যানারে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোও সক্রিয়।

হলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের আন্দোলনে রোববার চড়াও হয়েছিল ছাত্রলীগ। সোমবারও সে ধারা অব্যাহত ছিল।

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ২০১৪ সালে গঠিত ‘হল পুনরুদ্ধার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ ব্যানারে সকাল থেকে মিছিল করতে থাকে পুরান ঢাকার এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

তারা প্রশাসনিক ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিলে সব বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারের আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, তারা মিছিল করতে গেলেই ছাত্রলীগকর্মীরা বাধা দিচ্ছিল। 

‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ আন্দোলনের অন‌্যতম সংগঠক মনিরুল ইসলাম রাজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা খণ্ড খণ্ডভাবে মিছিল করেছি। ছাত্রলীগের ভয়ে সংঘবদ্ধ হতে পারিনি।

ফাইল ছবি

“ছাত্রলীগ আমাকে মারধর করে তাদের সাথে মিছিলে নিয়ে যায় এবং জোর করে স্লোগান দিতে বাধ্য করে।”

ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ‌্যে মনিরুজ্জামান দীপন, নাজমুল, কাজী হুমায়ুন ও অনিমেষ রায় আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন রাজন।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৩য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো সাধারণ শিক্ষার্থী, মিছিলের সময় আমি পড়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার উপর হামলা চালানো হয়। কারা হামলা চালিয়েছে বলতে পারি না।”

হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাসে এর আগেও যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, সে শিবিরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালিয়েছে।”

এ বিষয়ে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানান তিনি।

প্রক্টর নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “আমাদের কাছে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। দিলে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিব।”

এক পক্ষ অনশনে, অন্যপক্ষ শাহবাগে

সোমবার ধর্মঘট পালন শেষে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ‘অনশন ধর্মঘট’ পালনের ডাক দেন ‘হল পুনরুদ্ধার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’র আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগ সভাপতি শরীফুল।

তিনি বলেন, “আমরা মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনশন ধর্মঘট পালন করব।”

শরীফুল বলেন, “কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে, তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমরা বলেছি, সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”

ছাত্রলীগ নেতা বলেন, কেরানীগঞ্জে দুটি হল নির্মাণ করতে হবে। পরিত্যক্ত কারাগারের জায়গায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতার নামে চারটি হল করতে হবে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাটি সরিয়ে নিতে হবে।

অন‌্যদিকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ আন্দোলনের সংগঠক রাজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন শাহবাগে আছি। এখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

২০১৪ সালের হল আন্দোলনও গড়ে উঠেছিল হল পুনরুদ্ধার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে। ওই আন্দোলনে নজরুল ইসলাম হল উদ্ধার হয়; গতি পায় ছাত্রী হলের কাজের।

সম্প্রতি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নারায়ণগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া হলে ওই জমি হলের জন্য চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়।

প্রথমে গত ২ আগস্ট থেকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার' নামের একটি ফেইসবুক পেইজের ডাকে হলের দাবিতে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনে বাম সংগঠনগুলোর তৎপরতা বাড়লে পেইজটি থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে কর্মসূচি শুরু হয়ে যায়।

আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ছাত্রলীগ নেতারাও তাতে অবস্থান নিতে চান। এনিয়ে বিরোধও দেখা দেয়।

গত বুধবার পল্টন মোড়ে অবস্থান ধর্মঘট পালনকালে ছাত্রলীগ সভাপতি শরীফুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতিও হয়।

বাম সংগঠনের কর্মীরা ফেইসবুকে ছাত্রলীগকে এই আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রচার চালিয়ে আসছে। তবে ছাত্রলীগের দাবি, আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই তাদের।

বাম সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ‌্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহরাব আজাদ বলেছেন, বাম সংগঠনগুলো কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব চায়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বামরা কখনোই এ আন্দোলনে নেতৃত্ব চায়নি। আমরা তাদের সমর্থন করি।”