‘অগাস্ট আন্দোলন’ স্মরণে নানা কর্মসূচি, দোষী সেনা সদস্যদের বিচার দাবি

২০০৭ সালের অগাস্টে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেই আন্দোলন স্মরণে সভা-সমাবেশ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2016, 07:17 PM
Updated : 23 August 2016, 07:17 PM

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ‘কালো ব্যাজ’ পরেন। মানববন্ধনের পাশাপাশি আলোচনা সভা হয়।

এসব কর্মসূচি থেকে  ২০০৭ সালে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সেনা সদস্যদের বিচার দাবি করা হয়।

রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ২০০৭ সালের শুরুতে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারির কয়েক মাস পর ওই বছর ২০ অগাস্ট  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে কয়েক সেনা সদস্যের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ চড়াও হলে রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

টানা তিনদিন আন্দোলনের পর ২৩ অগাস্ট ছাত্রদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক এবং আটজন ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সারা দেশের শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালানো হয়।

পরে ছাত্র-শিক্ষকদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে মুক্তি পান কারাবন্দি ছাত্র-শিক্ষকরা।

পরের বছর থেকেই ২৩ অগাস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।

সেখানে বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “২০০৭ সালের সেই দিনের ঘটনা একটি বিচ্ছন্ন ঘটনা নয়। এটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিষয় ভোলে না। ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে যায়।

“যখনই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা রুখে দাঁড়িয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী কর্মসূচি পরিচালনা করেন।

ওই সময় কারাবন্দি হওয়া অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ ও  অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান প্রমুখ এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আলোচনা সভা হয়।

সেখানে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ তখন অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়।

“শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা সেদিন গণতন্ত্র বিকাশের পথকে সুগম করেছিল।”

২০০৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সজাগ থাকার আহ্বান করেন তিনি।

এই সভায় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক  মো. কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রমুখ ব্ক্তব্য দেন।