স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শখের আলোকচিত্রীদের পাশাপাশি পেশাদার আলোকচিত্রীদের ১৫৩টি ছবি নিয়ে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি-২ ও গ্যালারি-৬ এ চলছে এই উৎসব।
শুক্রবার দুপুরে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রদর্শনী চলবে ২ অগাস্ট পর্যন্ত।
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি উৎসবে আলোকচিত্র বিষয়ক কর্মশালা, সেমিনার, সাময়িকী প্রকাশ এবং ডিইউপিএস’র সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের পুনর্মিলনীর আয়োজন থাকছে।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফটোগ্রাফি ‘ক্রমেই জনপ্রিয়’ হচ্ছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ফটোগ্রাফির একটি ভাষা তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে। তরুণরা আগ্রহভরে ছবি তুলছে, কেউ শখের বশে, কেউ পেশাদারিত্বের সঙ্গে। অনুরোধ তোমাদের প্রতি, ফটোগ্রাফির সার্বিক বিষয়গুলো আয়ত্ব করো।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ফটোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও তিনি ভাবছেন বলে জানান।
প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
মন্ত্রী বলেন, “তরুণদের মধ্যে মানবিক বোধগুলো শাণিত হচ্ছে। সুন্দর এই পরিকল্পনার জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়।”
স্কুল অ্যান্ড কলেজ লেভেল- ক্যাটাগরিতে দ্বৈতভাবে প্রথম হয়েছেন অদিতি বৈরাগী ও নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ নিলয়।
আগুনের নানা রূপ ফ্রেমবন্দি করেছেন অদিতি।
আর তরুণ প্রজন্মের হতাশা আর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া ভীষণ ভাবায় নিলয়কে। মানসিক রোগ নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে একদিন তিনি পড়ছিলেন ‘সিজোফ্রেনিয়া’ সম্পর্কে। তারপর এক হতাশাগ্রস্থ বন্ধুর মুখকে ফ্রেমবন্দি করেন তিনি।
১৫তম বারের মতো কোনো আলোকচিত্র উৎসবে অংশ নিতে এসে নিলয় বলেন, সাধারণত ধারণাগত ছবি তুলতেই বেশি পছন্দ করেন। এছাড়াও স্ট্রিট ফটোগ্রাফি, ম্যাক্রো ছবি তুলতেও ভীষণ পছন্দ তার।
বরিশাল জেলা স্কুলের ছাত্র প্রদীপ্ত ফ্রেমবন্দি করেছেন ঘরের কোণে পড়ে থাকা প্রায় মৃতপ্রায় এক পাতাবাহারকে। ধারণাগত এই ছবির পাশাপাশি তিনি ভালোবাসেন স্ট্রিট ফটোগ্রাফি।
এক কিশোরীর মন খারাপের মুহূর্তকে ধারণ করেছেন ফেরদৌস হাসান। তার তোলা সেই ছবিটি উৎসব স্যুভিনিরের কভার ফটো করা হয়েছে।
এই ক্যাটাগরিতে মিরাজ হোসেন, নায়েম আলী, অর্পন পালদের ফ্রেমে ধরা পড়েছে আমাদের নাগরিক জীবনের চালচ্চিত্র।
আবু জাফর, মেহনাজ মহিউদ্দিনের ছবির বিষয় নারী। সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখা নারীর নানা মুহূর্তের ছবি ঠাঁই পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। অমিয় মাহবুব, তাসাওয়ার ইসলাম তৌসিফ, আহনাফ আরাবি মিশাল, আবদুল আওয়াল খান, মুহিবুর মারজানদের ছবিতে উঠে এসেছে ভ্রমণকাহিনি। ঘুরতে ভালোবাসা এই তিন তরুণ ক্যামেরায় ধারণ করেছেন বাংলার সবুজ-শ্যামল নৈসর্গিক চিত্রকে।
তারুণ্যের দিনলিপি, শহরকেন্দ্রিক দিনযাপনের গল্পের পাশাপাশি এই ক্যাটাগরিতে ঠাঁই পেয়েছে গ্রামীণ পটভূমিকার নানা গল্প। প্রকৃতির নানা উপকরণের পাশাপাশি সাপ আর পাখির নানা মুহূর্তকেও তড়িৎ দক্ষতায় ফ্রেমবন্দি করেছেন তরুণ আলোকচিত্রীরা।
‘পেশাদার’ ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পাওয়া সাখাওয়াত হোসেন সাফাতের ছবির বিষয় একাকীত্ব। দ্বিতীয় হওয়া তন্ময় দাস ফ্রেমবন্দি করেছেন, গ্রামের এক হেঁশেলকে। গ্রামীণ জীবনের আরও অনেক ছবির পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে বিলুপ্তপ্রায় সার্কাসের কথা। কারো ফ্রেমে ধরা পড়েছে উৎসবমুখর বাংলাদেশের কথা।
প্রকৃতি ও মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে মিমু দাশের সিরিজ ছবি ‘ফলস ইমপ্রেশন’-এ।
আলোকচিত্রী ফয়জুল নিশান ‘কিপ ফ্লাইং, হোয়াটেভার দ্য সিচুয়েশন ইজ’ শিরোনামের সিরিজ ছবিতে বলেছেন, মুক্তপ্রাণের গল্প। সব বাধা-বিঘ্নকে উপেক্ষা করে স্বপ্নের আকাশছোঁয়ার গল্পগুলোকে তিনি সাজিয়েছেন সাদা-কালো মাধ্যমে।
এছাড়াও নবীন আলোকচিত্রীদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে এবং বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্পের ইতিহাস ও বৈচিত্র্য তুলে ধরতে বাংলাদেশের কিংবদন্তি দশ আলোকচিত্রীর আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘এমিনেন্টস ওয়ে’।
রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজের মিরাজ তার বন্ধু মুকিত, তাসনিম, সিরাজদের নিয়ে ঘুরতে এসেছিল এই প্রদর্শনীতে।
সৈয়দা আশফাক দোহা দ্যুতি, আরুবা আয়েশাদের পছন্দ ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যামেরা হাতে তারা ফ্রেমবন্দি ঢাকাবাসীর ব্যস্ততম দিনযাপনের নানা মুহূর্ত।
এই আলোকচিত্র উৎসব প্রদর্শনীর মিডিয়া পার্টনার ক্নিক ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।