‘সৃজনশীলতার অভাব থাকছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে’

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শুধু ভালো ‘মার্কেট-বেইজড’ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং সৃজনশীল বিষয় না পড়ানোয় শিক্ষার্থীরা পাস করলেও তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা তৈরি হচ্ছে না বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে এক গোলটেবিল আলোচনায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 11:53 AM
Updated : 25 June 2016, 12:31 PM

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জাতীয় উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, ভর্তি পরীক্ষা নেই। টাকা থাকলেই সেখানে ভর্তি হওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেই।

“পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন দলিত শিক্ষার্থীও ভর্তি হতে পারে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি সম্ভব নয়।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা তৈরি করতে পারছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা চিন্তা করে গ্রামীণফোন, রবি বা কোনো ব্যাংকে চাকরি পাব। কিন্তু সৃজনশীলতার চিন্তা করতে পারে না।”

“আপনারা মার্কেট বেইজড বিষয় পড়াচ্ছেন। তাতে সৃজনশীলতা মিলছে কি,” প্রশ্ন রাখেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল শিক্ষায় ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলা ‘না পড়ানোর’ সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলা, অংক, সাধারণ বিজ্ঞান, রসায়ন, ইতিহাস পড়ানো হয় না। শিক্ষা যদি শুধু মার্কেট বেইজড হয় তাহলে জ্ঞান চর্চার সুযোগ খুবই কমে যায়।

“বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হয় না, এটা খুবই লজ্জার।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রদের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুট’ হিসেবে গণ্য করে। এজন্য তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা তৈরি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, “বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটের ওপর ফোকাসড। পৃথিবীর কোথাও এমনটা নেই।”

এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী

২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কয়েকটি ধারার সমালোচনাও করেন তিনি।

“শুরুর দিকে আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরোধিতা করেছিলাম। তবে সময়ের আবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। ভালো করছে।

“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৫ কোটি টাকা ডিপোজিট রাখতে হবে। ৩ একর জমির মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকতে হবে। আমাদের মতো ছোট দেশে এগুলো বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন।”

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের শিক্ষা বিস্তারে অনেক অবদান রাখছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।

বাংলাসহ সৃজনশীল বিষয় না পড়ানোর জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমালোচনাও করেন তিনি।

“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতির প্রবেশাধিকার নেই। মনে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা হিসেবে কাজ করছে।”

৩ একর জমি না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয় না- একথা উল্লেখ করে ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, “কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না পড়ানোর জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয় না কেন?”

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ এ আরাফাত।

এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শামসুল হক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জহিরুল হক, অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর উপাচার্য উইলিয়াম বিল অ্যাভেঞ্জার, বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ফয়েকুজ্জামান।