বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে প্রস্তাবিত এই বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
সারাদিন আলোচনা শেষে বিকাল ৫টার দিকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের এই বাজেট পাশ হয়।
সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সিনেটের বিশেষ আমন্ত্রণে বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন। বর্তমানে কোষাধ্যক্ষের পদটি খালি রয়েছে।
এ সময় অধিবেশনে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও সিনেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট অধিবেশনে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ৫৫৫ কোটি ১১ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করা হয়।
বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার গবেষণা খাতে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাজেটের প্রায় ৮৩ শতাংশই ব্যয় হবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে।
মোট বাজেটের ৮২ দশমিক ৫৪ শতাংশ ব্যয় হবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও পেনশনে। এর মধ্যে বেতন ও ভাতায় ৩৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও পেনশনে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
বাকি ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ মাত্র ৬০ কোটি ৮১ লাখ টাকা (৯ দশমিক ১৬ শতাংশ)। এর মধ্যে গ্রন্থাগারের জন্য বই কেনা, প্রকাশনা, যন্ত্রপাতি ক্রয়, শিক্ষাসফর, সেমিনার, পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ছাত্রদের ইন্টারনেট, শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি, বিভাগীয় খেলা, ছাত্র পরামর্শ, ছাত্রকল্যাণ রয়েছে।
২০১৫-১৬ সংশোধিত অর্থবছরে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি টাকা।
বাজেটের বাকি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ আসবাবপত্র, বিদ্যুৎ-গ্যাস-টেলিফোন বিল, চিকিৎসা সেবা, বিভাগীয় আপ্যায়ন ও সভা, পরীক্ষার খাতা, টিএডিএ, জ্বালানি তেল ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সাধারণ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে ব্যয় হবে।
এবারের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় দেড় কোটি টাকা বাড়ছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ৬০৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ৪১ কোটি টাকা নিজস্ব আয় ও ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঘাটতি রেখে এই বাজেট করা হয়েছে।
নিজস্ব আয়ের মধ্যে ছাত্রদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে ফি আদায় করা হবে ১৬ কোটি ৫০ লাখ, দালানকোঠা ও ভূসম্পত্তি থেকে ৮ কোটি ৮২ লাখ এবং বিবিধ দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
অধিবেশনে সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আদর্শিক ও প্রায়োগিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার আদর্শিক ও প্রায়োগিক দিক বিবেচনা করে সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।
অধিবেশনে বক্তৃতায় সিনেট সদস্য রামেন্দু মজুমদার দুটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। তার প্রস্তাব দুটির মধ্যে রয়েছে- জাতীয় রাজনীতিতে উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ডাকসু নির্বাচন দেওয়া এবং ভৌত অবকাঠামো নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর নতুন কোনো বিভাগ না খোলা।
একইসঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দেশের নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ডাকসু নিবার্চনের দাবি জানান তিনি।
সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন, অনেক ছাত্র আছে যারা রাজনীতি করার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। বাইরে থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে এসব ছাত্ররা।
ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় তাদের সকলের অংশগ্রহণে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভুইঁয়া বলেন, “জঙ্গিবাদের নামে টার্গেট কিলিং করে সরকারের উন্নয়নকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। কারা করছে?
“এটা স্পষ্ট… ইসলামের নামে হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করলেও যারা ইসলাম ধর্ম পালন করছে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, এটা জঙ্গিবাদের নামে রাজনীতিক হত্যাকাণ্ড।”
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার আহ্বানও জানান এই অধ্যাপক।