বিদ্যালয়ের সবচেয়ে ‘অবহেলিত’ কক্ষ গ্রন্থাগার: মিজান

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারের দুরবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সেগুলোর মানোন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2016, 11:45 AM
Updated : 30 April 2016, 11:45 AM

শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা যখন কোনো বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাই, তখন দেখি বিদ্যালয়ের সবচেয়ে অবহেলিত কক্ষ হচ্ছে গ্রন্থাগার।

“হুট করে গ্রন্থাগারে যেতে চাইলে শুনতে হয়- চাবি নেই, যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নাই। এরপরও কোনোমতে গ্রন্থাগারে ঢুকলে দেখা যায়, বইয়ের উপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে আছে।”

বেসরকারি সংস্থা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তরুণ শিক্ষার্থী সম্মেলনে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে তার এই বক্তব্য আসে।

ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ওই শিক্ষার্থী ড. মিজানের কাছে জানতে চায়, “স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগারের দুরবস্থা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?”

উত্তরে তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বইয়ের দিকেও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

গ্রন্থাগার নিয়ে ওই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একেএম নুর-উন-নবী বলেন, “বিদ্যালয় গ্রন্থাগারের এই অবস্থা নিরসনে সব বিদ্যালয়ে না হলেও অন্তত সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করা উচিত। এই লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নেবে এই আশা আমরা করি।”

সম্মেলনের এই পর্বে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্নে উঠে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়; একইভাবে উঠে এসেছে সমস্যা উতরে ভবিষ্যত গড়ার পথ বাতলে নেওয়ার জিজ্ঞাসাও।

আলোচকদের মধ্যে আরও ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালিদ, সঙ্গীতশিল্পী নকিব খান, গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী ও এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত।

এর আগে বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে ২৫ বছর পূর্তির দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীসহ অতিথিরা।

দিনব্যাপী আয়োজনে আরও ছিল ৩০টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ‘শিক্ষা ও উন্নয়ন মেলা’।

অনুষ্ঠানে ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল- “সমান মেধা ও যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে গেলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় কেন?”

এই প্রশ্নের জবাবে সচিব হুমায়ুন খালিদ বলেন, “আমরা যখন পিএসসিতে বিসিএসের ভাইভা নিই, তখন তাদের মধ্যে পার্থক্যটা দেখতে পাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সাবজেক্টে চান্স না পাওয়ার পরই বেশির ভাগ প্রাইভেটে যায়।

“তবে এই ব্যবধান এখন অনেকটা ঘুঁচে আসছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনেকক্ষেত্রে ভাল করছেন।”

এ পর্যায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘বাণিজ্যকেন্দ্র’ হিসেবে অভিহিত করেন মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড আর ইয়েলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি হলেও তারা সেই মানের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেটা না করে কেবলই বাণিজ্য করছে কেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।”

‘স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকতে হবে’

এভারেস্ট বিজয় কীভাবে করা যায়- শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নে এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী এম এ মুহিত বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা এভারেস্ট থাকে, সেটা তার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলে তার এভারেস্ট জয় হয়ে যাবে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এভারেস্ট জয়ের জন্য আসলে কিছুর দরকার হয়নি। আমি লেগেছিলাম, হয়ে গেছে। সেভাবে স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকতে হবে।”

কিভাবে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়- ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর এই প্রশ্নের জবাবে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ফারজানা চৌধুরী অধ্যবসায় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

“সফল উদ্যোক্ত হতে স্বপ্ন থাকতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। চ্যালেঞ্জিং কাজে বাধা আসে, সে বাধা টপকানোর মনোবৃত্তি ও অধ্যবসায় থাকতে হবে।”