সোমবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকার সমর্থক ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’।
তবে চূড়ান্ত পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত ছিল।
বেলা ১১টার পর টিচার্স ক্যান্টিন থেকে মৌন মিছিল বের করে ছাত্রলীগের হামলায় আক্রান্ত শিক্ষকরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই সমাবেশ করেন শিক্ষকরা।
সমাবেশে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমি এই আন্দোলনে শারীরিকভাবে না থাকলেও মানসিকভাবে একশত ভাগ সমর্থন করি ।
কিন্তু গতকালকের যে ঘটনা আমাকে দেখতে হলো তারপরে এখানে না আসলে অন্যায় হয়ে যায়।”
রোববার উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকও মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হন।
জাফর ইকবাল বলেন, “আমার এই জীবনে আমি অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু কালকের ঘটনার মতো কোনো ঘটনা যে আমাকে জীবনে দেখতে হবে তা কখনো কল্পনাও করিনি ।
“শরীরের আঘাতে কিছু আসে যায় না কিন্তু যে মানসিক আঘাত কোনোদিন ভালো হয় না । আমাদের ছাত্ররা আমাদের শিক্ষকদের গায়ে আঘাত করবে আর সেই দৃশ্য আমাকে সেটা দেখতে হয়েছে, সেটা কখনো ভুলব না আমি।”
অধ্যাপক ইয়াসমীন হক বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ বছর শিক্ষাদানের প্রতিদান এভাবে পাব সেটা কখনো ভাবিনি। শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত পরিপত্রে ‘পুলিশি অ্যাকশন’ এর কথা বললেও শিক্ষকদের উপর হামলা হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
তিনি বলেন, “যে ভিসি ঘণ্টায় ঘণ্টায় কথা পাল্টান তিনি কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে পারেন? যে শিক্ষকরা তিলে তিলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলেছেন তাদের গায়ে হাত তোলার কী বিচার হতে পারে আমার জানা নেই। আমি কারো কাছে বিচার চাই না। কোনো বিচারের দাবিও করব না।”
আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচাইতে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল ছাত্রলীগ, যার নেতৃত্বে ছিল উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া । উপাচার্যের লেলিযে দেওয়া পেটোয়া বাহিনীর হাতে শিক্ষক সমাজ লাঞ্চিত, এর চেয়ে লজ্জাজনক কোন কিছু হতে পারে না।”
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নেতা মো. ফারুক উদ্দিন, অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ শরাফউদ্দিন, অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দিপু, আব্দুল্লাহ আল শোয়েব, এমদাদুল হক, মোস্তফা কামাল মাসুদ, আল আমিন রাব্বী, সৌরভ রায় প্রমুখ।
এদিকে রোববারের ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি ও বিচারের দাবি জানান।