বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঋণ পুনর্গঠনের জন্য মোট আটটি আবেদন তাদের হাতে এসেছিল। তার মধ্যে বেক্সিমকো, যমুনা ও থারম্যাক্স গ্রুপের আবেদন বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বেক্সিমকোসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের দাবিতে চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালার সুবিধা নেওয়ার জন্য ৩০ জুনের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়, যে সময় মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
এর বাইরে আরও কয়েকটি ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা নিতে চায় জানিয়ে রূপ রতন বলেন, “কয়েকটি ব্যাংক আবেদন না করলেও ফোন করে জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকরা ঋণ পুনর্গঠন নিতে চায়। এজন্য আরও দু-একদিনের মধ্যে কোনো আবেদন আসলে আমরা নেব।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা জানান, এই সুবিধা পেতে হলে একক বা গ্রুপভুক্ত বকেয়া ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা হতে হবে। তবে একটি গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা হলেও এ সুবিধা নিতে পারবে।
পুনর্গঠন নীতিমালায় মেয়াদি ঋণ পরিশোধের সময় ধরা হয়েছে ১২ বছর। আর তলবি ও চলতি ঋণ পরিশোধের সময় ধরা হয়েছে ৬ বছর। ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠান প্রথম তিন বছর কোনো নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন পাঠিয়েছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম, ন্যাশনাল ও এবি ব্যাংক। এই গ্রুপটি ৪ হাজার ৯৫১ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা চায়।
থারম্যাক্স গ্রুপের ৬৬৬ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন এসেছে জনতা ব্যাংক থেকে। আর ডাচ্ বাংলা, জনতা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, অগ্রণী, আইএফআইসি, মার্কেন্টাইল, এসআইবিএল এবং ইউসিবিএল থেকে যমুনা গ্রুপের মোট এক হাজার ৪১১ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্গঠনের আবদেন করা হয়েছে।
এসব আবেদনে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১২ বছর এবং সুদ ১০ থেকে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ঋণ পুনর্গঠন সুবিধার আবেদন বাছাই কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তিন গ্রুপের আবেদন দেখছি। আবেদনে যেসব বিষয়ের কাগজপত্রের ঘাটতি আছে সেগুলো ব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছে। সবকিছু দেখে পুনর্গঠন পাবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
গতবছর বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের কয়েকটি ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি দেনা পরিশোধের সুবিধা চেয়ে গভর্নরের কাছে আবেদন করে। পরে চট্টগ্রামের এস আলম ও মোস্তফা গ্রুপও একই সুবিধা চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা অনুমোদন করার পর ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেছিলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামো সমস্যা ও আন্তর্জাতিক বাজার প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতেই এই নীতিমালা।
রুপ রতন পাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সর্বশেষ হিসাবে পুনর্গঠন সুবিধা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মোট ১৫টি গ্রুপের আবেদন জমা পড়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছে বলে জানান তিনি।
বেক্মিমকো, যমুনা এবং থার্মেক্স গ্রুপের বাইরে অন্য যে সব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন সুবিধা নিতে আবেদন করেছে সেগুলো হচ্ছে- শিকদার গ্রুপ ৬৮৬ কোটি টাকা, রতনপুর গ্রুপের ৪৩৫ কোটি টাকা, আব্দুল মোনেম গ্রুপের ৪৯৭ কোটি টাকা, কেয়া গ্রুপের ৮৭৯ কোটি টাকা, ইব্রাহীম গ্রুপের ৩৪০ কোটি টাকা, এস এ গ্রুপের ৭১৮ কোটি টাকা, বিআর স্পিনিং ৪৭২ কোটি টাকা, ক্যান-অ্যাম গার্মেন্টসের ১৫ কোটি, দেশবন্ধু সুগার মিলসের ৫৬ কোটি টাকা, এননটেক্সের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা, গিভেন্সী গ্রুপের ৬০ কোটি টাকা এবং নাসা গ্রুপের ২০০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গনের প্রস্তাব এসেছে।
তবে ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা অনুযায়ী এই সুবিধা পেতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ হতে হবে ৫০০ কোটি টাকা। যদিও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের আবেদনে যে পরিমাণ ঋণের উল্লেখ করা হয়েছে তাতে এই সুবিধা পায় না।
এ বিষয়ে রুপ রতন পাইন বলেন, “নীতিমালা বেশ আগে জারি করা হয়েছে। নীতিমালার বিষয়ে ব্যাংকাররা ভালো করেই জানেন। তারপরও এসব প্রস্তাব এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালার বাইরে কোন কিছু করবে না।”
যেসব প্রস্তাব নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদন পেতে পারে সেগুলো অনুমোদন পাবে বলেও জানান তিনি।