চিহ্নিত সমস্যার ২০% সমাধান: অ্যাকর্ড

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের চিহ্নিত ত্রুটিগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশের সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপের পোশাক আমদানিকারক ও ট্রেড ইউনিয়নের জোট- অ্যাকর্ড।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2015, 03:39 PM
Updated : 21 May 2015, 04:08 PM

অ্যাকর্ড বাংলাদেশের প্রধান নিরাপত্তা পরিদর্শক ব্র্যাড লওয়েন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই তিন বছরে যতগুলো ত্রুটি আমরা চিহ্নিত করেছি, তার ২০ শতাংশ সমাধান হয়েছে।”

দুই বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নত করার সবচেয়ে বড় তাগাদা আসে ক্রেতা সংগঠনগুলোর কাছ থেকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতারা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে দুটি জোট গঠন করে, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।

সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সক্রিয় পোশাক কারখানার মধ্যে অ্যালায়েন্স ৭০০ এবং অ্যাকর্ড ১৬১৯টি কারখানার কর্মপরিবেশ খতিয়ে দেখছে। এই কারখানাগুলো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৮৬ শতাংশ উৎপাদন করছে, যা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সেখানকার ৫টি পোশাক কারখানার ১১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন, যা পৃথিবীতে ভবন ধসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। এ ঘটনার কয়েক মাস আগেই আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১১১ জন নিহত হন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন অ্যাকর্ড মে ২০১৫ পর্যন্ত মোট ১৪৯৮টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ৬১৭টি কারখানায় দ্বিতীয় দফায় পরিদর্শন হয়েছে, যেটিকে বলা হয় ফলোআপ ইন্সপেকশন।

অ্যাকর্ড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রব হুইস বলেন, “দুই বছর শেষে সবচেয়ে বড় সাফল্যটি হলো কনকর্ড গ্রুপের দুটি কারখানা কনকর্ড ফ্যাশনস লিমিটেড বেং জিকন গার্মেন্টস অ্যাকর্ডের দেওয়া সবগুলো ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে।”

একে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখলেও অন্য কারখানাগুলোর মানোন্নয়নের কাজে ধীরগতির কথাও স্বীকার করেন তিনি।

“অনেকগুলো কারণে মূলত মানোন্নয়নের কাজে ধীর গতি রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানই আমাদের কর্মপরিকল্পনা বুঝতে পারেনি। তার উপরে সবচেয়ে বেশি সমস্যাটি হয়েছে ফায়ার ডোর ও ফায়ার এ্যালার্ম ইন্সটলেশনের ক্ষেত্রে।”

হুইস বলেন, যেহেতু প্রায় একই সঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানকেই ফায়ার ডোর ও ফায়ার এ্যালার্ম স্থাপন করতে বলা হয়েছে, এ কারণে এগুলো আনতে এবং স্থাপন করতে কিছুটা সময় লেগেছে।

“আবার অনেক কারখানা রয়েছে যারা আমাদের চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো উদ্যোগই নেয়নি।”

অ্যাকর্ড এ সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিদর্শন চালানো কারখানাগুলোর মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৪ হাজার ৪৩২টি ত্রুটি চিহ্ণিত করা হয়েছে।

এর মধ্যে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটি ২১ হাজার ১২৮টি, অগ্নি নিরাপত্তার ১৯ হাজার ২০৯টি এবং স্থাপত্যে ১৪ হাজার ৯৫টি।

চিহ্নিত সমস্যাগুলোর মধ্যে ২৫৭৯টির সমাধান হয়েছে, সমাধানের পথে রয়েছে ৪২ হাজার ২১২টি এবং মূল্যায়নের অপেক্ষায় রয়েছে ৯৬৪১টি।

সেফটি অ্যান্ড হেলথ কমিটি

দ্বিতীয় বর্ষপূতি উপলক্ষে কারখানাগুলোতে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের সমন্বয়ে সেফটি ও হেলথ কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে অ্যাকর্ড।

অ্যাকর্ড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রব হুইস বলেন, “আগামী মাস থেকে এ বিষয়ে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু হবে। ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্র্যান্ডগুলোর প্রস্তাবনার ভিত্তিতে কয়েকটি কারখানায় এটি শুরু হবে।”

এতে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা থাকবেন। অ্যাকর্ড তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে। ক্রমান্বয়ে এটি সবগুলো কারথানাতেই হবে।