চিনিতে শুল্ক আরোপ হচ্ছে না

চিনি আমদানির উপর শুল্ক আরোপের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2015, 03:33 PM
Updated : 19 May 2015, 03:33 PM

বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত- শিল্প মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে থেকে এমন কথাই বলা হয়েছে। 

আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে প্রধান প্রধান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ব্যবসায়ীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন।

সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি চিনি আমদানিতে ১০ টাকা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। চিনি শিল্প ও খাদ্য করপোরেশনের মজুদ দেড় লাখ টন চিনি বিক্রির উদ্দেশ্যে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে ওই বৈঠকের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগেই বৈঠক নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গ কথা বলেন।

এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বার্ষিক চাহিদা ও আমদানি বা মজুদের পরিমাণ তুলে ধরেন।

তিনি জানান, চিনির চাহিদা আছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে ১৪ লাখ ৮২ হাজার টন আমদানি হয়েছে। খুচরা বাজারে এখন চিনি ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বছরে আমাদের ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন মসুর ডালের দরকার। আমদানি হয়েছে ৪ লাখ টন। ছোলা দরকার ৬০ হাজার টন। আর আমদানি হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টন।”

“খেঁজুরের দরকার ১৫ হাজার টন, আমদানি হয়েছে ১৭ হাজার টন। সারা বছর পেঁয়াজের চাহিদা আছে ২১ থেকে ২২ লাখ। দেশে উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ টন। আর এনবিআরের তথ্য মতে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার টন। আদার চাহিদা ৩ লাখ টন, দেশে আড়াই লাখ টন আদা উৎপাদন হয়েছে আর আমদানি হয়েছে ৫১ হাজার টন।”

এছাড়া রসুন, হলুদ, গরম মসলা সব পণ্যই চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে মজুদ রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু রোজার মাস নয়, সারা বছর ধরেই পণ্যমূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, সরকার ব্যবসায় সহযোগিতা করবে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছি।”

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির তথ্য জানেন না মন্ত্রী

আসন্ন রমজানে কোন পণ্যের দাম বাড়বে না- এমন আশ্বাস বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়ার তথ্য নেই বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে।

সাংবাদিকরা তার কাছে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কি বলছেন, পেঁয়াজের দাম এখন কত। এত বাড়বে কেন, না না দাম বাড়েনি। দাম বাড়লে তো আমার কাছে খবর থাকতো। এখানে ব্যবসায়ীরা আছে তাদের কাছে জানতে চান, দেখেন কি বলে।”

এসময় কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, “স্যার পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে সেটা ভারতের কানপুরসহ প্রধান প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আমদানি না হওয়ায়। এটা সাময়িক। আমদানি শুরু হলে ঠিক হয়ে যাবে।”

গরুর মাংস নিয়ে পরে আলাপ

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তজা বৈঠকে গরুর মাংসের সরবরাহ কমে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে মন্ত্রীকে বলেন, “গরুর মাংসের সরবরাহ ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। গরু পাওয়া যাচ্ছে না।”

মন্ত্রী বলেন, “আজকের একনেকের বৈঠকে গরুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের একটি প্রকল্প ছিল গরু উৎপাদনের। সেটিকে গতিশীল করা হবে।”

এ সময় তিনি গরু পাওয়া না যাওয়ার কারণ জানতে চান।

জবাবে গোলাম মোর্তজা বলেন, “দেশে গরু উৎপাদন কমে গেছে। কলের লাঙ্গল আসায় এখন চাষিরা আর গরু পুষছে না।এদিকে ভারত থেকে যে গরু আসতো তা আর আসে না।”

কেন আসছে না- জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রীকে জানান, ভারতের হরিয়ানা, কর্নাটক থেকে যেসব গরু আসতো তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ওইসব গরু আসতে দিচ্ছে না।”

এসময় মন্ত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে এ বিষয়ে পরে আলাপ করা হবে বলে জানান।

এদিকে বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাস্তবসম্মত প্রতিবেদন দেওয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।

তোফায়েল বলেন, “আমি আপনাদের অনুরোধ করবো ভালোটা লেখেন। আমি বাজারে যাওয়াটা পছন্দ করি না। টিভি চ্যানেল নিয়ে বাজারে গেলাম, দাম জিজ্ঞেস করলাম, ফোন নম্বর দিয়ে আসলাম, এতে কিছু হয় না। বরং দাম বাড়ে। আপনারাও অনেক সময় সঠিক তথ্য না নিয়েই খবর দেন।”

“বললে তো মাইন্ড করবেন। আমাদের কেউ তারিফ করে না। নেগেটিভ নিউজ খোঁজে সবাই। কিন্তু সাধারণ মানুষ তারিফ করে। কারণ তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।”

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি টিআইবি’র মতো আচরণ না করার পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন, বাংলাদেশ পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা, ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তজা, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।   

এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন বেগম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিয়া, ইপিবি ভাইস চেয়য়ারম্যান শুভাশীষ বসু, টিসিবির চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।