ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ারে ‘কারসাজি’র সন্দেহ

জ্বালানি খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২৯ দিনের লেনদেনে ২৭ দিনই সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল এ কোম্পানির শেয়ার।

ফারহান ফেরদৌসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2015, 12:12 PM
Updated : 18 May 2015, 01:34 PM

১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এ শেয়ার প্রথম দিন হাতবদল হয় প্রিমিয়ামসহ ৭২ টাকায়। ২৮ দিনে এর দাম ১৯৫ শতাংশ বেড়ে সোমবার ২১৩ টাকায় পৌঁছেছে।  

মৌলিক কোনো কারণ ছাড়া এভাবে একটি কোম্পানির শেয়ারের দামে ঊর্ধ্বগতি স্বাভাবিক মনে করছেন না পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের সন্দেহ, ইউপিজিডিসিএলের শেয়ারের দাম ও লেনদেন বাড়ার পেছনে ‘কারসাজি’ থাকতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান সরাসরিই বলেছেন, “ইউপিজিডিসিএলের শেয়ারের দাম ও লেনদেন এভাবে বৃদ্ধির সঙ্গে কোম্পানির মৌল ভিত্তির কোনো সম্পর্ক নেই।”

তবে ইউনাইটেড পাওয়ারের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

৫ এপ্রিল ডিএসইতে লেনদেন শুরুর পর থেকে ২৭ এপ্রিল ও সোমবার বাদে প্রতিদিনই টাকার পরিমাণে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ইউপিজিডিসিএল।

প্রথম দিন ডিএসইতে মোট লেনদেনের এক চতুর্থাংশ দখল করে রাখে এ কোম্পানির শেয়ার।

সেদিন বাজারে মোট ৩১১ কোটি ৬১ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যার মধ্যে ইউপিজিডিসিএলের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

এরপর ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো লেনদেনের হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে নামে ইউপিজিডিসিএলের শেয়ার। সেদিন বাজারের মোট ৩২৩ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে এই কোম্পানির ছিল ৩৫ কোটি টাকা।    

রোববারও সর্বোচ্চ অবস্থান বজায় রেখে বাজারের মোট ৭১১ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে ৫৪ কোটি টাকার শেয়ার ছিল ইউপিজিডিসিএলের।

আর সোমবার ঢাকার বাজারে হাতবদল হওয়া ৭৫৩ কোটি টাকার শেয়ারের মধ্যে ইউপিজিডিসিএলের শেয়ার ছিল ২৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগেও দেখা গেছে আইপিওতে নতুন আসা শেয়ার প্রথমে অনেক দামে লেনদেন হয়। পরে এর দাম পরে যায় এবং মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

“কে বা কারা সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে তা খুঁজে বের করা উচিৎ”, বলেন তিনি।

প্রায় একইকথা বলেছেন ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই শেয়ারের দাম বাড়ার ‘ফান্ডামেন্টাল’ কোনো কারণ নেই। তবে ‘টেকনিকেল’ কারণ আছে। এই শেয়ারটির সরবরাহ খুবই কম, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে খুব কম শেয়ার আছে ।”

ইউপিজিডিসিএলের ৯০ শতাংশ শেয়ার পরিচালকদের হাতে, ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে।

শাকিল বলেন, “৩০ কর্মদিবস পরে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করলে সরবরাহ বাড়বে। তখন শেয়ারের দাম কমে আসতে পারে ।”

সোমবার ইউপিজিডিসিএলের পি/ই রেশিও ছিল ৪০ দশমিক ৭৮, যদিও জ্বালানি খাতের গড় পি/ই রেশিও ১৩ দশমিক ৪৫ ।

পিই রেশিও থেকে বোঝা যায়, একটি কোম্পানির শেয়ারের ১ টাকা মুনাফার জন্য একজন বিনিয়োগকারী কত টাকা বিনিয়োগ করতে চান।

সে হিসেবে বলা যায়, ইউপিজিডিসিএলের শেয়ারে ১ টাকা মুনাফা করার জন্য বিনিয়োগকারীরা ৪০ টাকার বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি বলেন, “অন্যান্য শেয়ারের সঙ্গে তুলনা করলে এ শেয়ারের বর্তমান দাম বেশি মনে হয়। তবে অনেকে হয়ত মনে করতে পারে এটি ভাল মুনাফা করবে।”

এবিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণভাবে বলতে পারি, গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে আইপিওতে আসা শেয়ারের দাম প্রথমে আনেক বেড়ে যায়।পরে শেয়ারের দাম আবার কমে আসে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিৎ।”

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৬২ টাকা প্রিমিয়াম যোগ করে ৭২ টাকা দামে বাজারে আসে ইউপিজিডিসিএলের শেয়ার । প্রথম দিনের লেনদেনেই এর দর ৮৭ শতাংশ বেড়ে ১৩৪ টাকা ৬০ পয়সা হয়।

এরপর ক্রমাগতভাবে প্রায় ২১৪ শতাংশ বেড়ে দ্বাদশ দিন ২১ এপ্রিল এ শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ২২৫ টাকা ৮০ পয়সায়।

এরপর টানা চার দিন কমে ২৭ এপ্রিল ইউপিজিডিসিএলের শেয়ারের দাম ১৭৩ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে।

পরে আবার ধাপে ধাপে বেড়ে ১৭ মে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম ইস্যু মূল্যের চেয়ে ২০৪ শতাংশ বেড়ে ২১৯ টাকা হয়।

এর আগে ৩ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২৩৭ কোটি  ৬০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে এ কোম্পানি।

কোম্পানির প্রসপেক্টাসে বলা আছে,  ৮৮ এবং ৭২ মেগাওয়াটের দুটি প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে বিক্রি করে ইউপিজিডিসিএল।

কারসাজির অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউনাইটেড পাওয়ারের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রশাসন বিভাগের (অ্যাডমিন) কর্মকর্তা মো. হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেক্রেটারি স্যার আজ (সোমবার) এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না।”

তিনি মঙ্গলবার যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।