রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব গ্রামীণফোনেও

বছরের শুরুর তিন মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা গ্রামীণফোনেও লেগেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2015, 01:54 PM
Updated : 5 May 2015, 04:31 AM

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আয়ের চিত্র তুলে ধরে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব শেঠি একথা বলেন।

“বছরের শুরুই হয়েছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। প্রায় তিন মাস ধরে চলে সে অস্থিরতা। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় আমাদের ব্যবসায়ও তার প্রভাব পড়েছে।”

“রাজনৈতিক অস্থিরতা আর প্রবল প্রতিযোগিতার কারণে বছরের শুরুটা ভালো হয়নি,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা আয় করেছে গ্রামীণফোন।

এই আয় ২০১৪ সালের একই সময়ের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি হলেও গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ কম বলে জানানো হয়।

সহিংসতাময় ২০১৩ সাল পেরুনোর পর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হলেও চলতি বছর শুরু হয় হরতাল-অবরোধের মধ্য দিয়ে।

তিন মাসের সহিংস আন্দোলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে বলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছেন, দেশকে পিছিয়ে দিতে বিএনপি জোটের ওই আন্দোলন।

সহিংসতা শেষের পর এখন খারাপ সময় পেরিয়ে ভাল কিছু আশা করছেন রাজিব শেঠি। 

“আমরা স্রোতের বিপরীতে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে গেছি এবং প্রান্তিকের শেষ দিকে ব্যবসার উন্নতি দেথা গেছে। সেবা ও পণ্যের ব্যবহার্যতা এবং নেটওয়ার্ক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে আমাদের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ব্যবসায় নতুন প্রাণসঞ্চার করবে বলে আমরা আশাবাদী।”

গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) আয়-ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন করে গ্রামীণফোন।

রাজিব শেঠি জানান, এই তিন মাসে নতুন পাঁচ লাখ যোগ হয়ে তাদের গ্রাহক সংখ্যা এখন ৫ কোটি ২০ লাখ, যা বাংলাদেশে মোট মোবাইল সিমের ৪২ শতাংশ।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গ্রামীণফোনের গ্রাহক বেড়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার হয়েছে।

প্রথম প্রান্তিকের নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও গ্রামীণফোন ‘ইন্টারনেট ফর অল’ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান গ্রামীণফোনের শীর্ষ কর্মকর্তা।

গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আয়কর দেওয়ার পর তাদের নিট মুনাফা হয়েছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ মার্জিনসহ ৫৪০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৭ শতাংশ মার্জিনসহ ৫২০ কোটি টাকা।

এই প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৯৬ পয়সা। গত বছর এই অঙ্ক ছিল ৩ টাকা ৮২ পয়সা।

গ্রামীণফোনের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) দিলীপ পাল বলেন, “দূরদর্শী তৃণমূল পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধি উদ্যোগের ফলে এই প্রান্তিকে আমরা মূনাফামূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। অধিকতর বিনিয়োগ হলেও আমাদের ক্যাশ ফ্লোর অবস্থান ভালো ছিল।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রথম প্রান্তিকে থ্রি জি নেটওয়ার্ক স্থাপন, টু জি নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন এবং দক্ষতা বাড়াতে ৩৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে গ্রামীণফোন।

এই তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটি কর, ভ্যাট, শুল্ক এবং লাইসেন্স ফি হিসেবে সরকারের কোষাগারে ১ হাজার ২১০ কোটি টাকা দিয়েছে, যা তাদের মোট রাজস্ব আয়ের ৪৮ শতাংশ।