আবাসনে ঋণ বাড়াতে নির্দেশ

সঙ্কটে থাকা আবাসন খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2015, 05:45 PM
Updated : 30 April 2015, 05:45 PM

বৃহস্পতিবার ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর আতিউর রহমান এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রতি তিনমাস পরপর ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সভা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবারের সভাটি সাড়ে চার মাস পর অনুষ্ঠিত হল।

গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজেমীও ছিলেন।

এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আবাসন শিল্পের সঙ্কট দূর করতে এ খাতে ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

“তবে তা যেন কোনোভাবেই সীমার বেশি (ওভার এক্সপোজড) না হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এ খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ জোগান দিতে বলা হয়েছে।”

আবাসন খাতে একক ঋণের(রিটেইল লোন) পাশাপাশি হোলসেল ঋণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

“অর্থাৎ কয়েকটি ব্যাংক মিলে অথবা কোনো একটি ব্যাংক হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে টাকা দিল, কর্পোরেশন সেই ঋণ ভালো গ্রাহকদের মধ্যে দেবে। এজন্য ব্যাংক ও কর্পোরেশনের মধ্যে এমওইউ হতে পারে,” বলেন সুর চৌধুরী।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(রিহ্যাব) গত ৯ মার্চ গৃহায়ন শিল্পে আবশ্যিকভাবে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য গভর্নরের কাছে আবেদন করে।

সংগঠনটি তাদের আবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক মন্দা, জমির মূল্য বৃদ্ধি ও জমির অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের ব্যাংক ঋণ বন্ধ থাকা ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণ দেখিয়েছিল।

এর আগে রিহ্যাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহায়ণ খাতে এককভাবে ঋণ দেওয়ার সীমা এক কোটি থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ২০ লাখ নির্ধারণ করে। এছাড়া ঋণ ও সম্পদ অনুপাতও ৭০:৩০ নির্ধারণ করে দেয়।

ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত বা অপসারণ না করার বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই ধরনের অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে বৈঠকে গভর্নর বলেন, “পর্যা‌লোচনা করে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংক কর্মকর্তারা বা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অন্যায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে অনেক ভালো কর্মকর্তার ক্যারিয়ার নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”

সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো কোনো ব্যাংক একবারে ২০০/৩০০ কর্মী ছাঁটাই করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। ব্যাংকগুলো তাদেরকে নন পারফরমার বলে ছাঁটাই করছে। কিন্তু আমরা বলেছি, নন পারফরমার হলে তারা নিয়োগ পেয়েছিল কিভাবে?”

নতুন কর্মকর্তাদের আমানত সংগ্রহ ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ বাস্তবসম্মত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিনা প্রয়োজনে নারী কর্মীদের কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময় যেন রাখা না হয়, সেই কথাও বলা হয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের।  

এছাড়া ঝুঁকি সহন ক্ষমতা নির্ধারণ না করে ঋণ বিতরণ না করা, ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ব্যাংক শাখার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান, ইষ্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তবে শুধু ব্যাংক পর্যায়ে নয়, সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।”