নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু হচ্ছে না এ বছরও

সরকারের ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ থাকলেও সহসাই ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেইউড।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2015, 03:36 AM
Updated : 13 April 2015, 04:07 AM

তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট বিমানের জন্য লাভজনক হবে না।

বর্তমানে বিমান বহরে ডজনখানেক উড়োজাহাজের মধ্যে লম্বা পথে চলাচলের উপযোগী বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ রয়েছে ছয়টি। এসব উড়োজাহাজ মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়, যে গন্তব্যগুলো বিমানের জন্য লাভজনক।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশের উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালাতে হলে সে দেশের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের (এফএএ) ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র দরকার হয়। বাংলাদেশের এই ছাড়পত্র না থাকায় ১৯৯৬ সালে এফএএর নিষেধাজ্ঞায় ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।

এই রুট আবার বিমানের জন্য খুলতে ২০১৩ সালের ১৭ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশকে ‘ফিফথ ফ্রিডম’ দেয়া হয়।

এভিয়েশনের পরিভাষায়, কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি দেশে বিরতি নেওয়াকে ফিফথ ফ্রিডম বলে। ফিরতি পথেও অন্য কোনো দেশে বিরতি নিলে তাকে বলা হয় সিক্সথ ফ্রিডম।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশের বসবাস নিউ ইয়র্কে হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে বিমানের ফ্লাইট চালুর দাবি তারা জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের তরফ থেকেও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।   

তবে নিউ ইয়র্ক রুট লাভজনক হবে না দাবি করে শুরু থেকেই দেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এ রুটে ফ্লাইট চালুর বিরোধিতা করে আসছিলেন।

এরপরও এ রুটে ফ্লাইট চালু করতে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে টিকিট ছাড়ার ঘোষণা দেন বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল। ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের জন্য ভাড়ায় আনা হয় দুটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ।

সেই উড়োজাহাজ দুটো এখনও বিমান বহরে যুক্ত। কিন্তু নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট আর চালু হয়নি।

গত সপ্তাহে বিমান সদর দপ্তর বলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক রুট নিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে কাইল হেইউড বলেন, “এ রুট চালুর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখতে গেলে এটি বিমানের লোকসানের বোঝা বাড়াবে।”

২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে বিমানের লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি টাকা। গত ১৮ বছরে মাত্র চার বার লাভের মুখ দেখতে পেরেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই বিমান পরিবহন সংস্থা।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেইউড বলেন, “নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালানোর জন্য উড়োজাহাজ ব্যবহার এবং যে পরিমাণ জনশক্তি ও জ্বালানি ব্যাবহার করতে হবে তা বিমানের জন্য লাভজনক হবে না।”

তাহলে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট কি সহসা চালু হচ্ছে না?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিমান একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার দায়িত্ব এর রয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফ্লাইট চালু করা যেতেই পারে। কিন্তু একইসঙ্গে আমার ওপর দায়িত্ব রয়েছে বিমানকে লাভজনক করার। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আমার মতামত তুলে ধরছি।”

বিমানের এমডি জানান, নিউ ইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালু হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (এফএএ)।তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে এবছর পেরিয়ে যাবে।

“যদি সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেটি বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।”

কাইলের মতে, প্রথম ছয় মাস নিউ ইয়র্ক রুটে ‘মোটামুটি ব্যবসা’ হয়তো চলবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশ ফ্লাইট চালাতে চাইলে তাকে এফএএ এর ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র পেতে হয়। সাধারণভাবে এতে নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মূলত ওই ছাড়পত্রের জন্যই বাংলাদেশকে এতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।