লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকে তারা ওই লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বাধা হিসেবে তুলে ধরেন।
গত দুই মাস ধরে সরকাবিরোধী জোটের আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতির দাবিতে শিল্প মালিকরা রাজপথে নেমে কর্মসূচিও পালন করেছেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে পোশাক শিল্প মালিক সংগঠনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, “স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনে রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা সবচেয়ে আগে প্রয়োজন।”
পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন (২৫০০ কোটি) ডলার আয় করে থাকে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
এই সময়ে উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮৪১ কোটি ডলার। আর নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮১৪ কোটি ডলার।
তবে মার্শা বার্নিকাট রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টি এড়িয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ওপর জোর দিয়ে তাতে তার দেশের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বিজিএমইএ সভাপতি রাষ্ট্রদূতকে বলেন, পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বেঁধে দেওয়া বাধ্যতামুলক কমপ্লায়েন্সের এর কাজ চলছে।
“রানা প্লাজা ধসের পরে অনেকেই ভেবেছিল, বেশিরভাগ কারখানাতেই অবস্থা খারাপ। কিন্তু অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে মাত্র ২৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বাকিগুলোতে যে সমস্যা ছিল, সেগুলোর সমাধান করা হচ্ছে।”
পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে ২৯৩টি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে দাবি করে আতিকুল বলেন, ক্রমান্বয়ে সবগুলোতেই ট্রেড ইউনিয়ন করা হবে।
প্রায় ৮৩ হাজার ৬৭৮ জন পোশাক শ্রমিককে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। পোশাক শ্রমিকদের জন্য চট্টগ্রামে একটি এবং ঢাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলার কথাও জানান তিনি।
পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশের উন্নতি ঘটাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসাও করেন তিনি।
“বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারে এ প্রক্রিয়াগুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে। এত বড় একটি দুর্ঘটনার (রানা প্লাজা ধস) পরে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে এটিকে মোকাবেলা করতে হয়।”
তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিতে আরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। আর সে বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।