সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে এই আশঙ্কা তুলে ধরে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে একগুচ্ছ প্রণোদনা চেয়েছেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, এক্সপোর্টার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি আসলাম সানি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন ও বিটিএমএর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
“আমরা এটাকে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য বড় থ্রেট মনে করছি। এদিকে ইউরো, রুবল ও কানাডিয়ান ডলারের দরপতনের কারণেও আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে।
এক বছরের ব্যবধানে ইউরোর দাম ১৯ শতাংশ কমেছে বলে জানান তিনি।
সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “পেট্রোল বোমা মারা, মানুষ মারা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো তা জানি না।”
পোশাক খাতের ক্ষতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ৪০টি কারখানার ওপর জরিপ করেছি। তাতে দেখেছি অবরোধ-হরতালের এই কদিনে এই ৪০টি কারখানার ১৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
বৈঠকে রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে দাবি দাওয়া তুলে ধরেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
তিনি বলেন, “গত দুমাসে রপ্তানি খাতে বিশেষ কোনো সমস্যা হয়নি। এজন্য সরকারকে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। এরপরও আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক ছিল বলেই আমরা উৎপাদন ঠিক রাখতে পেরেছি।
“তবে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় এবং কর্মীরা সময়মতো কারখানায় উপস্থিত হতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে আমরা সময়মতো শিপমেন্ট করতে পারছি না, এয়ারে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে।”
রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়কালে রপ্তানি ঋণ খেলাপি না করা, স্বল্প মেয়াদি ঋণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে ২৪ মাস করা ও পাঁচ বছরের জন্য নেওয়া প্রকল্প ঋণ আট বছরের ছোট কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ইউরোর দাম কমে যাওয়ার কারণে ইউরো জোনে যে রপ্তানি হয় সেই রপ্তানির বিপরীতে সক্ষমতা প্রনোদনা হিসেবে ৩ শতাংশ নগদ প্রণোদনার এবং নতুন বাজারের জন্য সরকারঘোষিত সকল প্রণোদনা দ্রুত ছাড় করার দাবিও করেন মুর্শেদী।
এছাড়াও তার দাবির মধ্যে রয়েছে- খেলাপি ঋণের প্রথম ধাপের (সাব স্ট্যান্ডার্ড) ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা তিন মাস থেকে বাড়িয়ে নয় মাস করা, সন্দেহজনক (ডাউটফুল) পর্যায়ের ঋণের সময়সীমা ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর করা ও ঋণ পুনঃতফসিলে ডাউন পেমেন্ট (এককালীন জমা) না রাখা এবং ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগ সব ধরনের ঋণ গ্রহীতাকে দেওয়া।
একইসঙ্গে আইডিআরএ আইনে বন্ধ থাকা বাকীতে বীমা আবার চালু করার এবং পরিবহন খাতের জন্য সরকারঘোষিত ক্ষতিপূরণ তা দ্রুত ছাড় অনুরোধ জানান তিনি।
সালাম মুর্শেদী বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আমরা এসব সুবিধা চাচ্ছি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকার এসব সুবিধা প্রত্যাহার করে নেবে।”
এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে তা যেন সব খাতে দেওয়া হয়।
এমসিসিআইয়ের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বড় বড় রপ্তানি খাতের পাশাপাশি ছোট রপ্তানি খাতকেও সরকারি সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান।
“চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনেতিক সংকট মোকাবেলায় একটি প্রণোদনা ব্যবস্থা করার কথা আমিও ভাবছি। আজ বা কাল যখন প্রয়োজন হবে সেটা ব্যবহার করা হবে।”
মুহিত বলেন, “এখন যে সমস্যা তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। দুমাস ধরে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। যদিও এই দুই মাসে বিশেষ ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে সহসাই ক্ষতি শুরু হবে।
“আমি চিন্তিত এই অবস্থা কতদিন ধরে চলবে। রাস্তার একটা শেষ থাকতে হবে। সেরকম কিছু দেখছি না।”