বন্দরে বেড়েছে কন্টেইনার ওঠা-নামা

বিএনপি জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যেও আগের বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার পরিবহন বেড়েছে।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2015, 05:19 PM
Updated : 27 Feb 2015, 05:19 PM

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫১ দিনে কন্টেইনার ওঠা-নামার পরিমাণ ২০১৪ সালের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) একরামুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর অবরোধ-হরতালের মধ্যেও বন্দরে প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৫৯টি কন্টেইনার ওঠা-নামা হয়েছে।

“২০১৪ সালের একই সময়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯০৩টি, যা চলতি বছরের তুলনায় ২৬ হাজার ৬৫৬টি কম।”

সাধারণত বন্দরে পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন বাড়াকে অগ্রগতির সূচক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

বন্দর কর্মকর্তাদের দাবি, অবরোধ-হরতালের পরেও বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে না। অন্যান্য সময়ের মতোই বন্দর থেকে প্রতিদিন স্বাভাবিকহারে কন্টেইনার এবং অন্যান্য পণ্যের নিয়মিত খালাসও হচ্ছে।

স্বাভাবিক ডেলিভারির কারণে বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনার পড়ে থাকার হার কম বলে জানান বন্দর ট্রাফিকের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক একরামুল।

তবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, বন্দরের কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা থাকলেও অবরোধ-হরতালের কারণে আমাদনি-রপ্তানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন হচ্ছে।

৬ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর দিনে আমদানি পণ্যবাহী দুই হাজার ২১৫টি কন্টেইনারের পণ্য বন্দর থেকে বেরিয়েছে। বিপরীতে দুই হাজার ৩৯৩টি রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজে পরিবহনের জন্য বন্দরে এসেছে।     

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বুধবারের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনার জমে আছে ২৫ হাজার ৪৩০টি। ৬ জানুয়ারি এই সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৭০০টি। বন্দরের ইয়ার্ডগুলোর ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার।

হরতাল-অবরোধে পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন যথাযথ না হলে ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনার জমে থাকার হার বেড়ে যাবার কথা।

বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে কন্টেইনারে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ৯২ শতাংশ পরিবহন হয়। বাকি আট শতাংশ মংলা বন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে হয়ে থাকে।

এসব কন্টেইনারে রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই পোশাক শিল্পের। আমদানি পণ্যের বেশিরভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও শিল্প কারখানার কাঁচামাল। কন্টেইনারে বাণিজ্যিক পণ্যও আমদানি হয়ে থাকে।

আমদানি ও রপ্তানিকারকদের পক্ষে দালিলিক প্রক্রিয়া সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, “সব কিছুই ঠিক মতো চলছে। তবে শঙ্কামুক্ত হয়ে কাজ করার পরিবেশ নেই।”

কন্টেইনার ওঠা-নামা প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও মহাসড়কে নাশকতার আশঙ্কায় পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে উল্লেখ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এতে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”

মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে একটি ট্রাক বা কভার্ড ভ্যান স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আট থেকে দশ হাজার টাকা বেশি ভাড়া দাবি করছে। এতে করে ব্যবসার খরচও বেড়ে গেছে।”

তবে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মুনীর আহমেদ বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান পরিবহনের ক্ষেত্রে বেশি নেওয়া হচ্ছে মাত্র কয়েক হাজার টাকা।

“অবরোধ-হরতালের আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার (ওয়ানওয়ে) ভাড়া নেওয়া হতো ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা ১৭/১৮ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে।”

অবরোধের শুরুর দিকে ভাড়া কিছুটা বেড়ে গেলেও পরে তা কমে আসে বলে দাবি করেন তিনি।

বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাক-কভার্ডভ্যান ও লরির চলাচল প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে বলে জানান মুনীর।