সৌদি যেতে আলাদা নিবন্ধন হচ্ছে না: মন্ত্রী

সৌদি আরব যেতে নিবন্ধন নিয়ে বিভ্রান্তির প্রেক্ষাপটে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে কর্মী পাঠাতে আলাদা করে কোনো নিবন্ধন এখনো হচ্ছে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2015, 07:51 AM
Updated : 17 Feb 2015, 08:26 AM

সারা দেশে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে যে নিবন্ধন চলছে তা বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য একটি ডেটাবেইজ তৈরির চলমান প্রক্রিয়া। সৌদি আরবসহ মোট ছয়টি দেশে কর্মী পাঠাতে এই ডেটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে।   

গত ১০ ফেব্রুয়ারি কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে ভিড় করতে থাকেন আগ্রহীরা। কয়েকটি স্থান থেকে গোলযোগেরও খবর পাওয়া যায়।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সৌদি আরবে যেতে আলাদা করে কোনো নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করা হয়নি। সৌদি আরব প্রাথমিকভাবে গৃহস্থালীর কাজের জন্য নারী কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এখনো তারা কোন ডিমান্ড পাঠায়নি।”

চলমান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “সারা বছরই বিদেশ গমনেচ্ছুদের একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়া আমরা চালিয়ে যাই। বর্তমানে আমাদের ডেটাবেইজ প্রায় ২২ লাখ লোক নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে নারী কর্মীরাও আছেন। ডিমান্ড পেলে প্রথমে এই ডেটাবেস থেকেই কর্মী বাছাই করা হবে।”

সৌদি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী যদি ডেটাবেইজে পাওয়া না যায়, তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইউনিয়ান তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে আলাদা নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, যারা কাজ নিয়ে বিদেশে যেতে চান তারা সারা বছরই কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোর মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন।

সাত বছর ধরে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে বছরে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নেওয়ার জন্য একটি চুক্তি করে সৌদি আরব।।

ওইদিন সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাদের নেতৃত্বে সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, সৌদি আরবে যেতে শ্রমিকদের যাতায়াত, ভিসা বা মেডিকেল ফি বাবদ কোনো খরচ লাগবে না। তবে পাসপোর্ট, নিবন্ধন ও ঢাকায় যাতায়াত বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

এদিকে সৌদি প্রতিনিধি দল চুক্তি করতে বাংলাদেশে আসার আগে ঢাকায় ডিজিটাল মেলা উপলক্ষে সৌদি আরবসহ ছয়টি দেশে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে বলা হয়।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও মন্ত্রীর ঘোষণার পর হরতাল-অবরোধের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিদেশে যেতে আগ্রহীরা প্রবাসী কল্যাণ ভবনে জড়ো হতে শুরু করেন নিবন্ধনের জন্য।

তাদের অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, নিবন্ধন করলেই হয়তো সৌদি আরবে যাওয়া যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের বাক-বিতণ্ডা ও হট্টগোলও হয়।

এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল মেলার মাঝপথেই নিবন্ধনের জন্য ফরম বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে একটি ‘অসাধু চক্রে’ মেলা প্রাঙ্গণেই সেই ফরম টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখেই আগ্রহীদের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়।

“মানুষ তো ঠেকে শেখে, আমরাও শিখলাম। আর এ কারণে অতি উৎসাহী হয়ে মানুষজন নিবন্ধন করতে শুরু করেছেন।”

আগামী ‘দুই একদিনের মধ্যে’ ডেটাবেইজ পর্যবেক্ষণ করে শুধু নারী কর্মীদের জন্য নিবন্ধন চালু করা হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।

কাজ নিয়ে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের দালালদের বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “নিবন্ধনের বাইরে কেউ বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর কোনো দেশে কাজের জন্য যেতে পারবে না। কেউ যদি বলে আমাকে টাকা দেন, আমি পাঠাব- তা বিশ্বাস করবেন না। এখন কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে দালালকে টাকা দেয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।”