রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পুঁজিবাজারে

নতুন সপ্তাহের শুরুর দিনেও পুঁজিবাজারে সূচক ও দরপতন হয়েছে, যার কারণ হিসাবে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার কথা বলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2015, 12:09 PM
Updated : 25 Jan 2015, 12:11 PM

৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ ও কয়েক দিন হরতালের মধ্যে দু-একদিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই দরপতন হয়েছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে; সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেন। বাজারের এই পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৮১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭১৬ পয়েন্ট হয়েছে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসইএক্স ২৭৯ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৪৫০ পয়েন্টে ঠেকেছে।

গত ২৫ দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে আড়াইশ পয়েন্ট। লেনদেন নেমে এসেছে দুইশ কোটি টাকার ঘরে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে প্রভাব পড়াটাই ‘স্বাভাবিক’। তবে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবেই তারা উদ্বিগ্ন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোথাও কোনো সুখবর নেই। সর্বত্র হতাশা-অস্থিরতা- সহিংসতা। এ অবস্থায় শেয়ার বাজার স্বাভাবিক থাকবে- এমন ভাবাটা বোকামি।”

তিনি বলেন, নতুন বছরে শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে সবাই আশা করেছিল। গত বছরের শেষ ভাগে তেমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতায় সব ‘ভেস্তে’ গেছে।

“সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল- কবে পরিস্থতি শান্ত হবে তা কেউ জানে না। কোনো আভাসই মিলছে না। প্রতিদিনই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে।”

সিএসইর চেয়ারম্যান আবদুল মুজিদ বলেন, টানা অবরোধ-হরতালে দেশের অর্থনীতি অনিশ্চয়তায় পড়ায় সবাই ‘সতর্ক অবস্থান’ নিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী- সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এর প্রভাবই প্রতিদিন সূচকে দেখা যাচ্ছে।

রোববার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮২ শতাংশের দাম কমেছে। সিএসইতে কমেছে ৭৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর।

রোববার ডিএসইতে ২২৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া ৩০৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৫২টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ৩৪টির। আগের দিনের দামেই কেনাবেচা হয়েছে ২১টি কোম্পানির শেয়ার।

টাকার পরিমাণে এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা দশ কোম্পানি হলো- সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, ডেসকো, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, জিএসপি ফিন্যান্স, ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এবং সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন ২৩ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। হাতবদল হওয়া ২৩৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ারের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ১৮২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির দাম।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুজ্জামান বলেন, “রাজনৈতিক সমঝোতার আশা দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির খবর আসতে শুরু করেছে। সেসব প্রভাবও বাজারে পড়ছে।”

আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা বাজারে না আসায় লেনদেন কমছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি তো আছেই; এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাইট মনিটিরিং এর কারণেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করছেন না।”

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, “রাজনৈতিক সহিংসতা তো আছেই; ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।”