অবরোধের ১৬ দিনে ক্ষতি ‘সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা’

বিরোধী জোটের অবরোধের ১৬ দিনে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির হিসাব দিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন বলেছে, এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2015, 02:41 PM
Updated : 22 Jan 2015, 02:46 PM

লাগাতার অবরোধের মধ্যে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি হোসেন খালেদ এই হিসাব তুলে ধরেন।

আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কটের অবসান ঘটিয়ে রাজনীতিকরা অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে দেশেকে রক্ষা করবেন বলেও ঢাকা চেম্বারের প্রত্যাশা।

নতুন বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই গত ৫ জানুয়ারি লাগতার অবরোধের ডাক দেন ২০ দলের নেত্রী খালেদা জিয়া।

বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি চলছে। নাশকতায় প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অনেক পণ্য নষ্ট হয়েছে, মহাসড়কে পণ্য পরিবহনও হচ্ছে বিঘ্নিত।     

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক দিনের জিডিপির পরিমাণ ৩ হাজার ৭০১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

“পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি মাসের ১৬ দিনের হরতাল-অবরোধে আমাদের অর্থনীতির ৩৬ হাজার ৪৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ। একদিনের ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।”

সংবাদ সম্মেলনে চলমান সঙ্কট উত্তরণে দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘সিটিজেন কাউন্সিল’ গঠনের পরামর্শ দেন হোসেন খালেদ।

এই কাউন্সিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা কোনোভাবেই রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হবেন না। কাউন্সিল সকল রাজনৈতিক দলকে সমানভাবে মূল্যায়ন করে গ্রহণযোগ্য সুপারিশ প্রণয়ন করবে, যা প্রয়োজনে সংসদে উপস্থাপন করা যেতে পারে।”

হোসেন খালেদ

সঙ্কট নিরসনে ‘প্রয়োজনে’ দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান ঢাকা চেম্বার সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৬ দিনের অবরোধ-হরতালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতের ক্ষতি ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

কৃষি খাতের ক্ষতি ৪ হাজার ৬০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা হিসাব করেছে ঢাকা চেম্বার। আবাসন ও পর্যটন খাতের ক্ষতি ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৪ হাজার ও ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। উৎপাদন খাতে ক্ষতির অঙ্ক ১০০ কোটি টাকা।

পাইকারি বাজার, শপিং মল, শো-রুম, মুদির দোকানের ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, স্থল বন্দর এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে ক্ষতি হয়েছে ৫২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সিরামিক খাতে ৩২০ কোটি টাকা এবং পোল্ট্রি শিল্পে ২৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ঢাকা চেম্বারের হিসাব।

তাদের হিসাবে প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিতে ক্ষতি হয়েছে ২৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বীমা খাতে ২৪০ কোটি টাকা, হিমায়িত খাদ্য খাতে ১২৮ কোটি টাকা এবং হকার্স খাতে ২৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে তার প্রভাব নিয়ে মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

হোসেন খালেদ বলেন, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে সকলের শাসনতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখা।

“এ লক্ষ্যে ডিসিসিআই মনে করে, যে কোনো পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হলে রাজনৈতিক দলগুলোকেই কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে, যাতে রাজনীতির কারণে অর্থনীতির ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”