অবরোধের কারণে উভয় সঙ্কটে পড়ার কথা জানিয়েছেন খুচরা পর্যায়ে জ্বালানি তেল বিক্রিকারী এই ব্যবসায়ীরা। একদিকে ডিপোতে তেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও নাশকতার আশঙ্কায় তারা নিয়মিত তেল সংগ্রহ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কিছু পাম্পে তেল থাকলেও যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে।
বেশি সহিংসতাপ্রবণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাহারায় ডিপো থেকে পাম্পে জ্বালানি তেল পৌঁছে দেওয়ায় ওইসব এলাকার পাম্প মালিকরা সঙ্কট প্রায় কাটিয়ে উঠেছেন।
তারপরও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের পাশের পাম্পগুলো এবং বৃহত্তর সিলেটের কিছু পাম্পে এখনো সঙ্কট রয়েছে।
কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের খালেক অ্যান্ড সন্স ফিলিং স্টেশন নিয়মিত তেল সংগ্রহ করে চাঁদপুরের মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো থেকে।
এই পাম্পের মালিক ফখরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত ১১ দিন ধরে তিনি চাঁদপুর থেকে তেল আনতে পারছেন না। অবরোধ শুরুর পর বিক্রিও কমে গেছে।
“স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার লিটার পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন বিক্রি হলেও অবরোধ শুরুর পর তা মাত্র এক হাজার লিটারে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি মাসে আমাকে প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে,” বলেন ফখরুল ইসলাম।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ডিপোগুলো গত সপ্তাহে জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছিল। টান পড়েছিল পাম্পগুলোতেও। তবে চারদিন বন্ধ থাকার পর গত মঙ্গলবার চট্রগ্রাম থেকে তেলবাহী ওয়াগন ট্রেন পৌঁছানোর পর সিলেটে জ্বালানি সঙ্কট কিছুটা কেটেছে।
ওইদিন প্রায় সাড়ে সাত লাখ লিটার জ্বলানি তেল সিলেটের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপোয় পৌঁছার পর পাম্পগুলোতেও সরবরাহ শুরু হয়। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে নৌপথে তেল যাচ্ছে সুনামগঞ্জে।
এছাড়া কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে সিলেটে জ্বালানি চাহিদার ২০ ভাগ পূরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে যান চলাচল কম থাকায় তেল বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের ফিলিং স্টেশনের মালিকরা।
সিনথিয়া ফিলিং স্টেশনের মালিক সজীব রঞ্জন দাস বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৮/১০ হাজার লিটার জ্বালানির চাহিদা ছিল। তবে অবরোধের মধ্যে ২ থেকে ৩ হাজার লিটারের বেশি বিক্রি হচ্ছে না। সরবরাহও কম।”
বিক্রি কমার কথা জানিয়েছেন ঢাকার গাবতলীতে অবস্থিত সোহাগ ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তা আব্দুর রহমানও।
তাদের পাম্প থেকে দিনে ১০ হাজার লিটারের মতো পেট্রোল-ডিজেল বিক্রি হলেও অবরোধ শুরুর পর তা চার হাজার লিটারে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
একই এলাকার মোহনা ফিলিং স্টেশন অবরোধ শুরুর আগে দিনে ১৫ হাজার লিটার জ্বালানি বিক্রি করলেও এখন ছয় হাজার লিটারে নেমে এসেছে বলে জানান এর ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও কুড়িগ্রামের চিলমারী ডিপো থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলার পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।এসব ডিপোয় পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকার কথা জানিয়েছেন বিপিসির বগুড়া আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী আনোয়ারুল ইসলাম।
রংপুর পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুও জেলায় জ্বালানি তেলের সংকট না থাকার কথা জানিয়েছেন।
তারপরও শুধু নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে এ অঞ্চলের পাম্প মালিক এবং কৃষকরা চাহিদা মতো তেল সংগ্রহ করতে পারছেন না, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পাম্পগুলোর বিক্রিতে।
“কিন্তু একদিকে গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় বিক্রি কমে গেছে, অন্যদিকে পাম্পগুলোর গ্রাম পর্যায়ের গ্রাহকরা ঝুঁকি নিয়ে তেল পরিবহনের সাহস পাচ্ছেন না, সঙ্কটের জায়গাটা এখানেই।”
বিপিসির মজুদ পর্যাপ্ত
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সর্বশেষ মঙ্গলবারের হিসাব মতে, সারাদেশে তাদের ডিপোগুলোয় নয় হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন পেট্রোল, আট হাজার ৩০০ মেট্রিক টন অকটেন, ১৬ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন জেট ফুয়েল, দুই লাখ ৯৮ হাজার ৩৯৯ মেট্রিক টন ডিজেল ও ৩৪ হাজার মেট্রিক টন কেরোসিন মজুদ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) মীর আলি রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, সারাদেশে তাদের ২০টি ডিপোতে জ্বালানির কোনো ঘাটতি কিংবা সংকট নেই। ডিপোর মজুদে আরো ১৫-২০ দিনের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
তাছাড়া অবরোধের খুব একটা প্রভাব সরবরাহে পড়েনি বলেও দাবি করেন তিনি।
এই কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে নদী পথে দেশের ৯০ ভাগ অঞ্চলে তেল সরবরাহ হয়ে থাকে। বাকি আট ভাগ রেলপথে এবং দুইভাগ যায় সড়ক পথে।
“নদীপথ সচল থাকায় তেল সরবরাহে অবরোধের প্রভাব পড়েনি।”
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিলেট, সুনামগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুর প্রতিনিধি।]