চট্টগ্রাম-কুনমিং সড়কে রাজি চীন

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও মিয়ানমার হয়ে কুনমিং পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে চীন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2014, 07:28 PM
Updated : 28 Dec 2014, 07:28 PM

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সফরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দেশটির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সাড়া পাওয়া গেছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

 সম্প্রতি চার দেশের মধ্যে বিসিআইএম নামের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা গঠনের যে আলোচনা, তার বাইরেই আলাদাভাবে চীনকে কুনমিং সড়কের প্রস্তাব দিল বাংলাদেশ।

রোববার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকেই প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি আলোচনা হল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং চীনের পক্ষে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে সম্পর্ক আরও জোরদারে দুইপক্ষই নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

বৈঠকে চীন দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) ব্যাপারে আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়।

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি।

আগামী বছরই বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক ৪০ বছরে পা দিতে যাচ্ছে। এর প্রাক্কালে গত শনিবার তিনদিনের জন্য নিজের প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরুর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ের ‘ঐতিহাসিক কক্ষ’ ঘুরে দেখেন, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন আলোকচিত্র টাঙানো রয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চলাকালে চীন বাংলাদেশকে দ্রুত ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানায় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে চীনের প্রতিনিধিরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন এবং আগামী বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উৎসবে আরও এই বিষয়গুলো ‘দৃঢ়’ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠক থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে আগামী বছরের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। 

চীনা প্রতিনিধি দলটি দেশের প্রেসিডেন্টকে ওই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানিয়েছেন, আগামী বছরের ওই চল্লিশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তারা চীনের ‘ভিভিআইপি’দের সফর আশা করছেন।

তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং পর্যন্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগ দুটোই প্রস্তাব করেছি।

“তারা (চীন) প্রাথমিকভাবে সড়ক যোগাযোগের ব্যাপারে বিশেষ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে,” বলেন পররাষ্ট্র সচিব।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকেও এতে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “চীন ওই প্রস্তাবকেও ভালো বলে মন্তব্য করেছে।”  

এছাড়া আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগের প্রসঙ্গ আসায় চীন আবারও গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান শহিদুল হক।

“আমরা তাদের সব প্রস্তাবই পরীক্ষা ও বিবেচনা করে দেখছি। বিসিআইএম করিডোরে গঠনে বাংলাদেশের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশংসা করেছে চীন।”   

বৈঠকে দুইপক্ষই পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে একমত হয়, যার প্রথম বৈঠকটি আগামী বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।   

হক বলেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তুষ্টি জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন।”  

এছাড়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে সহযোগিতার ব্যাপারেও চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে।