প্রায় বছর দুয়েক ধরে আবাসন ব্যবসায়ে মন্দা যাচ্ছে খাত সংশ্লিষ্টরা বলে আসলেও ফ্ল্যাট বা প্লটের দামে তার বিশেষ প্রভাব পড়েনি।
মেলায় ছাড়ের পড়েও সবচেয়ে কম দামে যে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে তার দাম প্রতি বর্গফুটে ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। আর মেলায় সর্বোচ্চ প্রতি বর্গফুট ৩০ হাজার টাকা দামেরও ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে।
সাড়ে ৫ হাজার টাকায় যেসব ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর অবস্থান উত্তরা, মিরপুরসহ ঢাকা শহরের চারপাশে।
শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব আয়োজিত শীতকালীন আবাসন মেলায় আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, আবাসন ব্যবসায়ীরা ফ্ল্যাটের কেনাবেচা কমে গেছে বললেও, দাম কমাচ্ছেন না। বরং কোম্পানিগুলো মেলায় দাম বেশি করে চাচ্ছে।
তবে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলছেন, “দাম বেশি বলা ঠিক হবে না। কারণ ছয় মাস আগে যেসব ফ্লাটে বিদ্যুৎ ছিলো না তখন এক ধরনের দাম ছিল।
ইউরোপের একটি তৈরি পোশাক ব্র্যান্ডের ঢাকা অফিসের নির্বাহী নাজমুল আহমেদ বিভিন্ন কোম্পানির ফ্ল্যাটের দরদাম একসঙ্গে জানতে মেলায় এসেছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন ধরেই শুনছি আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন- ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না, অনেক রেডি ফ্ল্যাট পড়ে আছে ইত্যাদি। পরিচিত অনেকে বলেছে, ফ্লাটের দাম কমেছে। কিন্তু এখানে (মেলায়) এসে দেখলাম দাম কমেনি বরং বেড়েছে।”
“আমি ছয় মাস আগে উত্তরাতে একটি ফ্লাটের বিষয়ে আলাপ করেছিলাম। তখন ওই এলাকায় ৫ হাজার টাকা প্রতি বর্গফুট পাওয়া যাচ্ছিল। মেলায় তা পাওয়া যাচ্ছে না,” বলেন তিনি।
তৈরি ফ্ল্যাট এবং বুকিং দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বসবাস শুরু করা যাবে এমন বিজ্ঞাপনের আকর্ষণে অনেকেই মেলায় এসে নাজমুলের মতই দাম শুনে হতাশ হচ্ছেন ।
মেলায় আসা মো. হেদায়েত নামের একজন ক্রেতা বলেন, “ফ্লাটের দাম অনেক বেশি। ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এক কোটি টাকায় মিলছে না। কোন কোন কোম্পানির ফ্ল্যাট মিললেও যেসব এলাকায় মিলছে তা পছন্দ হচ্ছে না।”
বুধবার শুরু হয়েছে পাঁচদিনব্যাপি এই মেলা। শুক্রবার তৃতীয় দিনে মেলায় ছিলো উপচেপড়া ভিড়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শকরা আসতে শুরু করেছে। বিকালের দিকে ভিড় বেড়ে যায় অনেক।
রিহ্যাব সচিব আজমল হোসেন জানান, “গত দু’দিনের তুলনায় আজ (শুক্রবার) দর্শক সমাগম বেড়েছে।”
তবে কত টিকিট বিক্রি হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের মেলায় ক্রেতাদের অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি তৈরি ফ্ল্যাটগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছে।”
এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এনা প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নূর আলম সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক ক্রেতা মেলায় আমাদের সাথে আলাপ করে সাইটে যাচ্ছেন। এটা আমাদেরকে উৎসাহিত করছে।”
জাপান গার্ডেন সিটির উপ ব্যবস্থাপক শাহ মো. জাহিদ হোসেন বলেন, “স্পট সেল যেটাকে বলে সেটা পাচ্ছি না। তবে অনেকে প্রজেক্ট ভিজিট করছে।
“আমরা অনেক দাম কমিয়েছি। এখন যে দামে বিক্রি করা হচ্ছে এর চেয়ে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। এতে গ্রাহক না পাওয়া গেলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
আর এফ বিল্ডার্স লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপক এ কে জীবন বলেন, “মেলায় বিক্রি হবে এটা মুখ্য না। আমরা প্রচারণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য মেলায় এসেছি। অনেকে আমাদের স্টল ভিজিট করছে।”
মেলায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুই ধরনের ফ্লাট ও জায়গা বিক্রি হচ্ছে। নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের পাশাপাশি রয়েছে তৈরি ফ্ল্যাট।
আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রির পাশাপাশি জমি চেয়ে মেলায়ই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।
ক্রেতাদের জন্য রয়েছে দামে ছাড়সহ নানান ধরনের উপহার।
এবারের মেলায় ১৫০টি স্টল রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১৩৫ টি স্টল বিভিন্ন আবাসন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের। আর ১৫টি স্টল ব্যাংক, পরিবেশ বান্ধব ইট, জেনারেটর, টাইলস ও রাজউকের।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি এলাকার প্লট ও ফ্ল্যাটের প্রদর্শন চলছে মেলায়।