আইপিও অনুমোদনের আগে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

কয়েকটি কোম্পানির আইপিও মূল্য নিয়ে বিতর্ক ওঠায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2014, 12:07 PM
Updated : 25 Dec 2014, 12:45 PM

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রথম কাজ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। সুতরাং ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইপিওর (শেয়ারের প্রাথমিক দর প্রস্তাব) মূল্য নির্ধারণের পরই তা বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেওয়া উচিৎ।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনকে এক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

‘শেয়ার মূল্য নির্ধারণে কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক ঐ চিঠিতে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইপিওর মূল্য নির্ধারণ না করলেও আইন অনুযায়ী কমিশনের মূল উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব হলো পুঁজিবাজার সম্পর্কিত প্রতারণা ও অসাধু ব্যবসা বদ্ধ করা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি ফেইস ভ্যালুর (অভিহিত মূল্য) সঙ্গে প্রিমিয়াম যোগ করে কয়েকটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসার পর দেখা যাচ্ছে, প্রিমিয়ামসহ আবেদনের সময় যে দাম নেওয়া হয়েছিল তার চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”

বিনিয়োগকারীদের এই ক্ষতি থেকে বাঁচাতে ভালোভাবে দেখে-শুনে, যাচাই-বাছাই করে মূল্য নির্ধারণের অনুমতি দিতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে যেসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে এসেছে সেগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য আবেদনের সময় প্রিমিয়ামসহ যে দর নেওয়া হয়েছিল তার চেয়ে কম বা প্রায় সমান অথবা সামান্য বেশি।

গত বছর ২৪ ডিসেম্বর বাজারে আসে অ্যাপোলো ইস্পাত নামের প্রকৌশল খাতের একটি প্রতিষ্ঠান। দশ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১২ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২২ টাকায় শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা তুলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

প্রথম দিন এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় ৩৮ টাকায়। পরে এর দাম আরও খানিকটা বেড়ে ৪৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু ঠিক এক বছরের মাথায় বুধবার অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০ টাকায়।

অর্থাৎ, আইপিওতে ২২ টাকা বিনিয়োগ করে যে বিনিয়োগকারী অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার কিনেছিলেন, এক বছরে তিনি ২ টাকা লোকসানে আছেন।

অ্যাপোলো ইস্পাতের এই শেয়ার বাজারে ছাড়া নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বিএসইসির মতবিরোধও হয়েছিল।

সে সময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, বিএসইসি বেশি প্রিমিয়ামে এই কোম্পানিকে বাজারে শেয়ার ছাড়ার অনুমিতি দিয়েছে।

অভিযোগ এসেছে আরো কয়েকটি কোম্পানির প্রাথমিক দরপ্রস্তাবের অনুমোদন নিয়েও।

চলতি বছরের ৪ মার্চ বাজার থেকে ৪০ কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহের জন্য ৪ কোটি শেয়ার ছাড়তে বিএসইসির অনুমতি পায় খুলনা পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানি (কেপিপিএল)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে অভিযোগ করে এক বিনিয়োগকারী আদালতে গেলে হাই কোর্ট আইপিও কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।

পরে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে দিলে অগাস্টে বাজারে আসে কেপিপিএল। প্রথম দিন তাদের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ৪৩ টাকায় উঠলেও বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ২২ টাকায়।  

বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান সাসা ডেনিমস লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর একটি রুল জারি করেছে উচ্চ আদালত।

রফিকুল ইসলাম ও ফারুক মোল্লা নামের দুই ব্যক্তি ‘জনস্বার্থের’ কথা ‍উল্লেখ করে গত সপ্তাহে একটি রিট আবেদন করলে আদালত এই রুল দেয়।

১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৫ টাকা প্রিমিয়াম ধরে ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ১৭৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সাসা ডেনিমসকে। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য ২১ ডিসেম্বর ছিল আইপিও আবেদনের শেষ দিন।

সাসা ডেনিমসের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পারভীন মাহমুদ, যিনি পানিসম্পদমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের স্ত্রী। তাদের ছেলে শামস মাহমুদ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত এক বছরে যেসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে এসেছে তার অনেকগুলোই রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমতি পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বেশি প্রিমিয়ামসহ আইপিও ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগে মতিঝিলে বিএসইসি ভবনের সামনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভও করেছেন।

এসব কারণেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার দিকে আরো বেশি মনোযোগী হতে বলেছে।

চিঠিতে বলা হয়, আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের সময় মিথ্যা দেওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপের ক্ষমতা বিএসইসির রয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ামে শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে একাধিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি রয়েছে যা ব্যবহার করে তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের পর অনুমোদন দেওয়া উচিৎ।