আগামী পাঁচ বছরে গ্রামীণফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় এই মোবাইল ফোন অপারেটরের।
কম দামে থ্রি জি মোবাইল হ্যান্ডসেট সরবরাহ, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ও কনটেন্ট তৈরিতেও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
৫ কোটি গ্রাহক সংখ্যা অতিক্রম নিয়ে বৃহস্পতিবার জিপি হাউজে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিবেক সুদ।
বাংলাদেশে ডেটা ব্যবসার উজ্বল ভবিষ্যত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ফোরজি বা এলটিই’র মতো নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে তাদের স্পেকট্রাম রোডম্যাপ ঘোষণা এবং স্পষ্ট নীতিমালা তৈরির সুপারিশও করেন বিবেক সুদ।
প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরের মাথায় বাংলাদেশের প্রথম অপারেটর হিসাবে গত অক্টোবরে ৫ কোটি গ্রাহকের মাইলফলক অতিক্রম করে গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটির এই গ্রাহক সংখ্যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর প্রায় ৪২ শতাংশ।
১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণফোন। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে গ্রামীণফোনের।
দেশজুড়ে ৮ হাজার ৬০০ বেজ স্টেশনের মাধ্যমে মোবাইল ফোন সেবা দিচ্ছে গ্রামীণফোন, যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশের মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশকে তাদের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পেরেছে।
৫ কোটি গ্রাহকের অপারেটর গ্রামীণফোনের ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক নরওয়েজিয়ান কোম্পানি টেলিনর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম : ৫ কোটি গ্রাহক সংখ্যা অতিক্রম সাফল্যকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
বিবেক সুদ: এটি আমাদের জন্য বড় সাফল্য। খুব কম দেশেই, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে একটি প্রতিষ্ঠানের ৫ কোটি গ্রাহক রয়েছে। এই গ্রাহকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত সেবা ও মানসম্মত অভিজ্ঞতা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
বিবেক সুদ: আমরা নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি। গ্রাহকরা মনে করে আমাদের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে ভাল এবং আমরা এই অবস্থান ধরে রাখতে চাই। শুধু ভয়েস সার্ভিস নয়, ডেটা সেবায়ও আমরা বেশি সময় দিচ্ছি। আগামী পাঁচ বছরে গ্রামীণফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলাদেশে ডেটা ব্যবসায় কী ধরনের ভবিষ্যত রয়েছে বলে মনে করেন?
বিবেক সুদ: বর্তমানে আমাদের এক কোটির বেশি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে। বাংলাদেশে ৬০ লাখ ফেইসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে, এর সংখ্যা আরও বাড়ছে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা প্রতিদিন ৬৪ থেকে ৬৫ টেরাবাইট ব্যবহার করে থাকে, গত বছর এপ্রিল-মে মাসে তা ছিল মাত্র ১৪ থেকে ১৫ টেরাবাইট। এ থেকেই বোঝা যায় এখানে ভাল ব্যবসা রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ৫ কোটি গ্রাহক সংখ্যা অতিক্রমের পর গ্রামীণফোনের ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কী?
বিবেক সুদ: আমরা এখন বিভিন্ন ধরনের সেবা কনটেন্ট এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরির দিকে যাচ্ছি, যা আমাদের পাইপলাইনে রয়েছে। তবে কী ধরনের নতুন আকর্ষণ রয়েছে সে বিষয়ে এখনই বলছি না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: থ্রি জি গ্রাহক বৃদ্ধিতে গ্রামীণফোনের মূল ফোকাস কী হবে?
বিবেক সুদ: আমরা হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি।
গ্রামীণফোন থ্রিজি গ্রাহকেরা তাদের মোবাইল ডিভাইসে বর্তমান ইন্টারনেট প্যাকেজে কোনও বাড়তি খরচ ছাড়াই দ্বিগুণ গতির ইন্টারনেট উপভোগ করতে পারছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: থ্রি জি গ্রাহক বাড়াতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন?
বিবেক সুদ: থ্রি জি হ্যান্ডসেটের দাম কমাতে হবে। বিশেষ করে মানুষকে জানতে হবে কেন তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন এবং এ থেকে কিভাবে লাভবান হবেন। এজন্য বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের সাথে আমরা কাজ করছি।
এখনো অনেক গ্রাহক টু জি হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, থ্রি জি গ্রাহক বৃদ্ধিতে হ্যান্ডসেটের দাম কমাতে হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এক বছর হলো থ্রি জি সেবা চালু করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি আরও আধুনিক ও উচ্চগতির প্রযুক্তি এলটিই বা ফোর জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপনি কি মনে করেন ফোর জি চালু করার এখন উপযুক্ত সময়?
বিবেক সুদ: গ্রাহকরা সবসময় উচ্চগতি বা ফোর জির জন্য মুখিয়ে থাকে। আমরা কেবল থ্রি জি চালু করেছি, এক্ষেত্রে আমাদের আরও কাজ করার আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকে পরিষ্কার ধারণা না দিলে নতুন কোনও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা কষ্টকর।
এটি নির্ভর করবে সরকার (ফোর জির জন্য) কী মূল্য ধরবে এবং নিয়ন্ত্রক নীতিমালা কী ধরনের হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এখনো স্পেকট্রাম রোডম্যাপ পাইনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: থ্রি জির জন্য ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিয়েছে গ্রামীণফোন। ডেটা গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামীণফোনের আরও তরঙ্গ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কি না এবং এই পরিমাণ তরঙ্গ (১০ মেগাহার্টজ) দিয়ে মানসম্মত সেবা দিতে পারবে কি না?
বিবেক সুদ: থ্রি জির জন্য আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। ভারতে ৫ মেগাহার্টজ দিয়ে চলছে এবং তাদের গ্রাহক সংখ্যাও অনেক বেশি। আরও বেশি তরঙ্গ বরাদ্দ নেওয়া প্রয়োজন মনে করছি না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: নিয়ন্ত্রক সংখ্যা বিটিআরসির নিয়ন্ত্রক কাঠামোর বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
বিবেক সুদ: বিটিআরসির সাথে আমাদের আগের চেয়ে বেশি বৈঠক ও পরামর্শ হচ্ছে। অপারেটর ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্পর্ক খুব ভালো। বর্তমানে আমাদের ‘তাৎক্ষনিক ইস্যু’ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। ভবিষ্যতের ইস্যুগুলো নিয়ে আমরা ভাবছি। নতুন নীতি কী ধরনের হবে, তা দেখছি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: গ্রামীণফোনের ৫ কোটি গ্রাহকের জন্য কোনও বিশেষ বার্তা রয়েছে কি?
বিবেক সুদ: ৫ কোটি গ্রাহককে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদেরকে বলব, নতুন নতুন সেবা উপভোগ করার জন্য আমাদের সাথে থাকুন।