জিএসপি: একযোগে কাজের অঙ্গীকার

তৈরি পোশাক খাতে দ্রুত জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজ করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনে শেষ হয়েছে ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ তৃতীয় অংশীদারী সংলাপ’।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 06:17 PM
Updated : 30 Oct 2014, 06:17 PM

২৮ ও ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দুদিন ব্যাপী এ সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।

ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালও অংশ নেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রায়ান নর্টন।

সংলাপের প্রথম দিন উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা ইস্যুতে গ্রুপভিত্তিক আলোচনা এবং শেষের দিন দ্বি-পাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশ কিভাবে কার্যকর অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়।

বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার ও কর্মস্থলের পরিবেশ নিরাপদ করতে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা হয়।

তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখার জন্যে বাংলাদেশ অনলাইন ডাটাবেজ ব্যবস্থা চালু করায় তার প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দল। এ প্রক্রিয়াটি সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতিতে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে সংলাপে উল্লেখ করেন তারা।

এছাড়া কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ, পরিদর্শনের মাত্রা বৃদ্ধি, নতুন শ্রমিক ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দেয়া এবং শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করে শ্রমিক অধিকার সুসংহত এবং শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় আরও অগ্রগতি সাধনে সংলাপ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়।

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তার জন্যে বাংলাদেশের উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে উল্লেখ করে 'ইউএসএইড' থেকে আরও পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হবে বলে সংলাপে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

চলতি মাসের ২০ তারিখে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইউএস-আইএলও’ বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে এ সংলাপে দুই দেশ তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

এছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের অন্য দেশে পাচার বন্ধে, বিশেষ করে বিদেশের শ্রম বাজারে পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

দুই দেশের মধ্যে আলোচনার বিভিন্ন বিষয়ে মিডিয়া নোট দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রায়ান নর্টন বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও গভীর এবং প্রসার করতে সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে একযোগে কাজের অঙ্গীকার করেছেন।"

সংলাপে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং ইতোমধ্যে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে পরস্পরের সহায়তার হাত আরও প্রসারিত করার কথা উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া উগ্রপন্থিদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা রোধ এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থ সহায়তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য একটি আঞ্চলিক কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ এ কর্মশালার আয়োজন করবে।

বাংলাদেশে সুশীল সমাজের অবাধ বিচরণ, নাগরিকের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রশ্নে সুশীল সমাজের কার্যক্রমকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার করা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সর্বাত্মক সমতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে উভয় দেশ পরস্পরের সহযোগিতার অঙ্গীকার করে।

ইবোলা চিকিৎসায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রেও সার্বিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয় এ সংলাপে।

গত বছরের মে মাসে ঢাকায় দ্বিতীয় অংশীদারি সংলাপের পর গত ১৭ মাসের অগ্রগতিও স্থান পায় আলোচনায়। এছাড়া ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের চতুর্থ সংলাপ ঢাকায় আয়োজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতামূলক এ অংশীদারী সংলাপের আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।